—ফাইল চিত্র।
লাগোয়া আসানসোল ডিভিশনে বুধবার থেকে লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আদ্রা ডিভিশনে কবে তা চালু হবে, তা নিয়ে রেল নিশ্চিত ভাবে কিছু জানায়নি। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘আদ্রা ডিভিশনে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রোল বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড অনুমতি দিলেই ট্রেন চালানোর দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেওয়া হবে।”
আদ্রা ডিভিশনের সমস্ত শাখায় লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া হয়ে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার দাবিতে কয়েকমাস ধরে সরব হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। আন্দোলন শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। বিশেষ করে সিপিএম, তৃণমূল, এসইউসি-সহ কয়েকটি দল একাধিকবার বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন শুরুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে, অবস্থান-বিক্ষোভ করেছে। একাধিক বার দাবি জানানো হয় আদ্রার ডিআরএম-এর কাছেও। নানা মহলে আলোচনার প্রেক্ষিতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের গোড়াতেই আদ্রা ডিভিশনে লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চাকা গড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন সকলে।
কিন্তু আসানসোল-সহ কিছু জায়গায় এ দিন থেকে লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু হওয়ায় আদ্রা ডিভিশনের ট্রেনযাত্রীদের আশাভঙ্গ হয়েছে। কেউ কেউ রেলের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগও তুলছেন।
ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রী সংগঠনগুলি। ‘আদ্রা-খড়্গপুর রেলওয়ে ইউজার্স ফোরাম’-এর যুগ্ম সম্পাদক দেবু চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, আদ্রা দিয়ে বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার স্পেশাল ট্রেন চলছে। প্রতিদিন বহু মালগাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন কেন শুরু করা হচ্ছে না, তা স্পষ্ট করছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। দেবুবাবু বলেন, ‘‘আদ্রা-খড়্গপুর শাখায় দৈনিক কম-বেশি পাঁচ হাজার নিত্যযাত্রীর যাতায়াতের ভরসা লোকাল ট্রেন। আমাদের দাবি, অবিলম্বে লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো শুরু করুক রেল।’’
একই দাবি জানাচ্ছে ‘আদ্রা-ভাগা শাখার ডেলি প্যাসেঞ্জার ফোরাম’। সংগঠনের জ়োনাল সম্পাদক তপন মজুমদার জানাচ্ছেন, লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁর মতো অনেকেই প্রতিদিন ১০০ কিলোমিটারের বেশি মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আশা ছিল, বুধবার থেকে লোকাল ট্রেন শুরু হয়ে যাবে। সমস্যা মিটবে কয়েকহাজার নিত্যযাত্রীর। ট্রেন শুরু না হওয়ায় অত্যন্ত হতাশ আমরা।”
এ দিন থেকে ট্রেন শুরু না হওয়ার ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা লোকসভায় রেলের স্থায়ী কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যন বাসুদেব আচারিয়া। তিনি বলেন, ‘‘আদ্রা ডিভিশনে ট্রেন চালানো নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বার আলোচনা করেছি। প্রতিবারই জানানো হয়েছে, বুধবার থেকে আসানসোল ডিভিশনের সঙ্গেই আদ্রাতেও লোকাল ট্রেন শুরু করা হবে। কিন্তু তা হল না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
ট্রেন চালানো নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজ্যের যুযুধান দু’দল তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে তরজা চলছিল। এ দিন তা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির অভিযোগ, আদ্রা ডিভিশনের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। পূর্ণবাবুর দাবি, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। আদ্রা ডিভিশনে ট্রেন চালাতে অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। তারপ রেও ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ডিভিশনে লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালাতে গড়িমসি করছে রেল।’’
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্য আদ্রার ব্যাপারে অনেক দেরিতে ছাড়পত্র দিয়েছে বলেই এ দিন ট্রেন শুরু করতে পারেনি রেল। আগেও রাজ্য সরকার কেন্দ্রের দেওয়া রেশন বণ্টনে ঢিলেমি করেছিল বলেই, দেরিতে রেশন পেয়েছিলেন রাজ্যের উপভোক্তারা।’’
বাসুদেববাবুও বলেন, ‘‘এ দিন কেন ট্রেন শুরু হল না, তা জানতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চিফ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অফিসারকে ফোন করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, করোনার কারণে রেল বোর্ড বন্ধ রয়েছে।’’ রেলের একটি সূত্রের খবর, শুক্রবার রেল বোর্ডের অফিস খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরে হয়তো আদ্রা ডিভিশন নিয়ে কোনও খবর আসতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy