চেনা ছবি ফিরেছে তারাপীঠ মন্দিরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
উত্তরে হাওয়ায় জানান দিচ্ছে শীত। বোলপুর, তারাপীঠ এখন পর্যটকে ভরা। করোনা কালে জেলার দুই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের ছবি ঠিক কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ কিস্তি—
জাতীয় সড়কে রামপুরহাট থানার বগটুই মোড়। তারাপীঠ যাওয়ার যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও অটো বা ট্রেকার পাচ্ছেন না। রামপুরহাট স্টেশন থেকে সমস্ত অটো-ট্রেকার পর্যটকদের গাড়ি ভাড়া করে তারাপীঠ নিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে রামপুরহাটে।
অথচ এমন ছবি ক’মাস আগেও ছিল না। যাত্রী না পেয়ে সারাদিন বসে থাকতে হত অটো-ট্রেকারকে। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। রামপুরহাট থানার বড়শাল গ্রামের এক অটোচালক জানালেন দুর্গাপুজোর পর থেকেই কেবলমাত্র তারাপীঠের যাত্রীদের রামপুরহাট স্টেশন থেকে যাতায়াত শুরু হওয়ায় তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। রামপুরহাট স্টেশনের অটো ট্রেকার ইউনিয়নের সম্পাদক জাহাঙ্গীর শেখ জানালেন, তারাপীঠ মন্দির খোলা থাকলেও দর্শনার্থীদের পুজো দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে বছরখানেক আগেও তারাপীঠে দর্শনার্থীদের ভিড় হতো না। তারাপীঠ থেকে রামপুরহাট রাস্তায় ট্রেকার অটো চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারাপীঠ মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে এবং রামপুরহাট আসার জন্য হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশন থেকে অধিকাংশ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়ার ফলে তারাপীঠে দর্শনার্থীদের ভিড় উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন অনেকটাই চেনা ছন্দে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র তারাপীঠ। তারাপীঠ লজ মালিক সমিতির সম্পাদক সুনীল গিরি জানালেন, সারা বছরই তারাপীঠে পর্যটকদের সমাগম হয়। কিন্তু গত বছর তারাপীঠের লজ ব্যবসা থেকে সমস্ত ধরনের ব্যবসা মার খেয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই তারাপীঠে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের জন্য অনলাইন বুকিং শুরু হয়েছে। মাস তিনেক আগেও করোনা পরিস্থিতিতে লজ ব্যবসা মার খাওয়ার জন্য লজ মালিকরা ইলেকট্রিক বিল শোধ করতে হিমসিম অবস্থায় পড়ছিলেন। দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তেই লজ মালিকেরা কিছুটা হলেও আর্থিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন।’’ একই কথা জানালেন তারাপীঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শিবসাধন দাসও।
তারাপীঠে আসা দর্শনার্থীদের জন্য শান্তিনিকেতন, বক্রেশ্বর, মশানজোড় এই সমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে নিয়ে আসার ব্যবসা করেন বহু পর্যটন ব্যবসায়ী। পর্যটক না আসায় তাঁদের ব্যবসা দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল। তাঁরাও আবার তাদের ব্যবসা শুরু করতে পেরেছেন। সৌমেন দাস নামে তারাপীঠের এক পর্যটন ব্যবসায়ী জানালেন, ‘‘এখন দু-একটা করে বাস তারাপীঠ থেকে শান্তিনিকেতন, বক্রেশ্বর, মশানজোড় যাওয়ার জন্য যাচ্ছে। আশা করা যায় ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও ভাল হবে।’’
তারাপীঠের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে রামপুরহাটের বাজারের ব্যবসাও অনেকটাই নির্ভরশীল। তারাপীঠে পর্যটন চেনা ছন্দে ফিরতেই তার প্রভাব পড়েছে রামপুরহাট বাজারেও। রামপুরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লক্ষ্মীপ্রসাদ ভকত জানালেন, ‘‘বছর দেড়েক ধরে তারাপীঠে তেমন ব্যবসা চলছিল না। বর্তমানে তারাপীঠে রামপুরহাট বাজার থেকে আগের মতোই ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা শুরু করেছেন।’’
তবে তারাপীঠে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়লেও কোভিড বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শিথিলতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিশেষ করে তারাপীঠ মন্দির চত্বর, শ্মশান চত্বর এলাকায় দর্শনার্থী থেকে তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইতদের মধ্যে কোভিড বিধি মানার তেমন বালাই নেই। লজে দর্শনার্থীদের ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ লজে কোভিড বিধি মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না বলে অনেক পর্যটকের দাবি। সেক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের ভিড়ে তারাপীঠে পর্যটন শিল্প আগের চেনা ছন্দে ফিরলেও করোনা বিধি মেনে চলার শিথিলতায় সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায় বলে মনে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy