Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Rampurhat

বাবার ইচ্ছেকে সম্মান, বৃদ্ধের দেহদান ছেলে-মেয়ের

কুসুমডৈ গ্রামের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকায় মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে কৃষ্ণচরণ নজির গড়লেন বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

বাবার ইচ্ছেপূরণের পরে। রামপুরহাট মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

বাবার ইচ্ছেপূরণের পরে। রামপুরহাট মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫২
Share: Save:

১২ বছর আগে ডাক্তারি পড়ুয়াদের কথা ভেবে মরণোত্তর দেহ দানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন রামপুরহাট থানার কুসুমডৈ গ্রামের এক বৃদ্ধ। জীবিত অবস্থায় দেহদানের অঙ্গীকার করে যাওয়া বাবা কৃষ্ণচরণ মুখোপাধ্যায়ের সেই ইচ্ছে পূরণ করলেন ছেলে ও মেয়ে। সোমবার দুপুরে কৃষ্ণচরণের প্রয়াণের পরে মঙ্গলবার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে তাঁর মৃতদেহ তুলে দেন তাঁর ছেলে কৃষ্ণসাধন ও মেয়ে সুরঞ্জনা। দুর্গাপুরের একটি সংস্থা ওই বৃদ্ধের দান করে যাওয়া দু’টি চোখও সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুসুমডৈ গ্রামের বাড়িতে সোমবার দুপুরে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যু হয় কৃষ্ণচরণের। বয়স হয়েছিল ৬৫। ১২ বছর আগে নিজের শারীরিক চিকিৎসার জন্য কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন মরণোত্তর দেহদান এবং চক্ষুদান করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এর আগে রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন গ্রাম থেকে চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে দুর্গাপুরের ওই সংস্থা দান করা চোখ নিয়ে গিয়েছে। তবে কুসুমডৈ গ্রামের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকায় মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে কৃষ্ণচরণ নজির গড়লেন বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

কৃষ্ণচরণের ছেলে, পেশায় মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম ব্লকের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র কৃষ্ণসাধন মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁর বাবা গ্রামের বাড়িতে বসে সবসময় চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্রামের মানুষজন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। সেই ভাবনা থেকেই কৃষ্ণচরণ মরণোত্তর দেহদান এবং চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন বলে জানান তাঁর ছেলে।

কৃষ্ণচরণের কন্যা সুরঞ্জনা জানান, সেপ্টেম্বর মাসে পড়ে গিয়ে তাঁর বাবার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করার পরে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে থাকাকালীন বাবা একাধিকবার তাঁর মৃত্যুর পরে দেহদান এবং চক্ষুদানের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য মা, দাদা ও আমাকে বলেছিলেন। সোমবার দুপুরে বাবার মৃত্যুর পরে আমরা বাবার ইচ্ছে অনুযায়ীবীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই সংস্থার সহযোগিতায় দুর্গাপুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে বাবার দুটি চোখ দান করা হয়। পরে মরণোত্তর দেহদানের জন্য সংস্থার মাধ্যমে মেডিক্যালে যোগাযোগ করে বাবার মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়।’’

রামপুরহাট মেডিক্যালের এমএসভিপি পলাশ দাসের কথায়, ‘‘মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদান বাস্তবিকই একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের পরিচয়। রামপুরহাট মেডিক্যালে এখনও পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছটি মৃতদেহ দান করা আছে। আরও বেশি প্রচার দরকার। আরও বেশি করে যাতে চোখ, লিভার, কিডনি এ সমস্ত অঙ্গদান করা হয় সে জন্য আরও বেশি উদ্যোগ দরকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Body Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy