নানুরের বাসাপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
এ-ও এক ‘শহিদ দিবস’। তবে, ২১ নয়, এর তারিখ ২৭ জুলাই। এই দিনটিকে বীরভূমের ‘শহিদ দিবস’ হিসাবে বহু বছর ধরে পালন করে আসছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। অন্যান্য বছর জমায়েত ভালই হয়। কিন্তু এ বার নানুরের সেই শহিদ সমাবেশে রেকর্ড সংখ্যক জমায়েতে করতে চান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই রেকর্ড সমাবেশ করাটা যে চ্যালেঞ্জ—একান্ত আলোচনায় মানছেন শাসকদলের নেতারা। বিশেষ করে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলই যেখানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে!
অন্য বছরগুলিতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ‘শহিদ সমাবেশ’-এ নেতৃত্ব দেন যে অনুব্রত, তাঁকে এ বার পাওয়া যাবে না। অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে এ বার ২১ জুলাই ধর্মতলাতেও আশানুরূপ লোক নিয়ে যেতে পারেননি জেলার বাকি নেতারা। ফলে, নানুরের সমাবেশ সফল করা তাঁদের কাছে আরও বড় ‘মর্যাদার লড়াই’। লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের দুই আসনে তারা জিতলেও বিজেপি যে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, তা স্পষ্ট। তার উপরে বিজেপিতে নাম লেখানোর পাশাপাশি তাদের কর্মসূচিগুলি জমায়েত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংঘর্ষ বাড়ছে দু’দলের। তার সঙ্গে জুড়েছে ‘কাটমানি’-র ধাক্কা। যার আঁচ পড়েছে নানুরেও। সব মিলিয়ে ব্যতিব্যস্ত তৃণমূল নেতারা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করেই বিরোধীদের বিশেষ করে বিজেপির উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতে চাইবেন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের জন-সমর্থন প্রমাণ করতে বাসাপাড়ার শহিদ সমাবেশ কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছে।
কাল, শনিবার সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, পুরমন্ত্রী তথা বীরভূমের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম, কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ , জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী প্রমুখ। নানুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ হাজার লোক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ২০০টি বাস এবং শ’তিনেক ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
২০০০ সালের ২৭ জুলাই নানুর সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুর খুন হন। খুনের দায়ে ২০১০ সালে ৪৪ জন সিপিএম নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন পরবর্তী কালে হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। সংশোধনাগারে বন্দি থাকাকালীন কয়েক জনের মৃত্যু হয়। বাকিরা এখনও সাজা খাটছেন। ওই গণহত্যার পরে নানুরের বাসপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহিদ বেদি তৈরি করে ‘শহিদ দিবস’ পালনের আয়োজন করেন তখনকার বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে প্রায় প্রতি বছর দলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে ওই সমাবেশে হাজির থেকেছেন মমতা। সমাবেশে শুধু বীরভূম নয়, লাগোয়া বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ যোগ দেন।
এখন অবশ্য জেলার রাজনৈতিক ছবি অনেকটাই আলাদা। বিজেপি-র উত্থান চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। লোকসভা ভোটের পরেই দলের প্রতি বিষোদ্গার করে দিল্লিতে গিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা। শহিদ সমাবেশে লোকসমাগম আটকাতে গদাধর-শিবির উঠেপড়ে লেগেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। গদাধর অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে, তৃণমূল সমাবেশে লোক টানতে চেষ্টার কসুর করছে না। দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথ কমিটি স্তরে জমায়েতের সংখ্যা বেঁধে দিয়ে কার্যত ‘হুইপ’ জারি করা হয়েছে। সমাবেশ স্থলে তা গুনে দেখেও নেওয়া হবে। কম লোক এলে জবাবদিহি চাওয়া হবে। পাশপাশি পাড়ায় বৈঠকও করা হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান অবশ্য বলছেন, ‘‘শহিদ সমাবেশ ভরানোর জন্য হুইপ জারি করতে হয় না। ওই দিন নিয়ে মানুষের একটা আবেগ আছে। সেই আবেগের টানেই মানুষ আসবে।’’
তবে দলেরই একাংশ এই দাবি ঘিরে সন্দিহান। বিশেষত যেখানে দলের ভিতরকার দ্বন্দ্বে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। সঙ্গে রয়েছে বিজেপি-র দাপট বৃদ্ধি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, অনুব্রত হাসপাতালে। বিজেপি-র জেলা সহ সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘আগের মতো আর লোকসমাগম হবে না তৃণমূলের। তবে ওরা শাসকদল বলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেককে সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত কিংবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসার ভয়ে মুখ দেখাতে যেতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy