‘ভুয়ো’ ভোটার খুঁজতে ‘ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ’ কর্মসূচিতে গোটা দলকেই মাঠে নামিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়াতেও বুথ স্তরে ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা শুরু করেছে দলের নেতা-কর্মীরা। সেই সমীক্ষায় এ পর্যন্ত হাজার দুয়েক ‘অস্তিত্বহীন’ ভোটারের সন্ধান মিলেছে বলে দাবি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “পুরুলিয়ার সাত বিধানসভা থেকেই অস্তিত্বহীন ভোটারের সন্ধান মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখনও জেলার সমস্ত বুথে সমীক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি। সমীক্ষা শেষ হলে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”
কারা ‘অস্তিত্বহীন’ ভোটার? তৃণমূলের দাবি, ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে কোনও ভোটারের নাম, বাবার নাম নেই। কিন্তু সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর-সহ তাঁর ছবি আছে। গ্রামে গিয়ে সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ওই ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনও বাসিন্দার ছবিই মিলছে না। স্থানীয়েরাও জানাচ্ছেন, ভোটার তালিকায় থাকা ব্যক্তি এলাকার বাসিন্দা নন। সৌমেনের দাবি, তাদের আশঙ্কা ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ হলে এমন ‘অস্তিত্বহীন’ ভোটারের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়বে।
সম্প্রতি ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণে জেলা, ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে আলাদা কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, আগেই তারা জেলা স্তরের কমিটি গড়ে কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করেছেন।
কমিটিতে জেলা সভাপতি ছাড়াও রয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো,সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো, পঞ্চায়েত সমিতিগুলির সভাপতি, ব্লক সভাপতি ও শহর কমিটিগুলির সভাপতি-সহ বিধায়ক, সাংসদ ও জেলা পরিষদের দলীয় সদস্যেরা। সৌমেন বলেন,“জেলা স্তরের কমিটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। পরের ধাপে ২১-২৭ মার্চের মধ্যে ব্লক স্তরের কমিটি ও ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে পঞ্চায়েত ও পুরসভাভিত্তিক কমিটিগুলি তৈরি করা হবে।”
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটিগুলির সদস্যেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত বিশদ রিপোর্ট জেলায় দেবে। এ ছাড়াও দলের নির্দেশ মতো জেলায় এক জনকে ‘বুথ লেভেল এজেন্ট’ বা ‘বিএলএ-১’ পদে রাখা হবে।
সূত্রের খবর, ওই পদে জেলার কোন নেতাকে রাখা হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বই। ওই পদে সম্ভাব্য পাঁচ নেতার নাম জেলা থেকে রাজ্যে যাবে। এর আগে ওই পদে ছিলেন জেলা সভাপতি সৌমেনই।
সূত্রের খবর, ‘বিএলএ-১’ পদে থাকা ব্যক্তি দলের তরফে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে যোগাযোগ রাখবে। প্রয়োজনে অভিযোগও জানাবেন। সৌমেন বলেন, “পরিবর্তিত নিয়মে বছরভরই ভোটার তালিকায় নাম তোলা যায়। তাই বিএলএ-১ পদের দায়িত্ব দল যাঁকেদেবে, তাঁকে সব সময়েই এ নিয়ে নজরদারি চালাতে হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)