নানুরে বঙ্গছত্র গ্রামে কর্মী সম্মেলনে কাজল শেখ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
নিয়মিত জনসংযোগ বৃদ্ধি, ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য থেকে নেতাদের কাজের সমালোচনা— নানা ভূমিকায় অনুব্রতহীন বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠনে ক্রমশ ‘দাপট’ বাড়াচ্ছেন কোর কমিটিতে জায়গা পাওয়া নানুর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি কাজল শেখ। যোগাযোগ বজায় রাখছেন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও। শুক্রবার কলকাতা গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে তিনি দেখা করে জেলার ‘রিপোর্ট’ দিয়ে এসেছেন বলে দলের অন্দরের খবর।
কাজলের এমন ভূমিকায় যে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন, অস্বস্তিও বাড়ছে সে কথা আড়ালে কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন জেলার তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘কাজল শেখ নিজেকে অনুব্রত ভাবতে শুরু করেছেন। তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে কোর কমিটিতে স্থান দিয়েছেন তাঁকে নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা মানে দলের বিরোধিতা করা।’’ কাজল নিজে বলছেন, ‘‘কোনও কাজে যদি আমি কলকাতা গিয়ে থাকি তাহলে দেখা করাটা আমার অন্যায় নয়। আমরা দলটা যে ভাবে চালাচ্ছি, নানুরে কী করছি, কী করছি না সেটা তো আমাকে জানাতেই হবে। সেটা ববিদাকে জানিয়েছি। সুব্রত বক্সীকে নয়।’’
গত ৩০ জানুয়ারি বোলপুরের রাঙাবিতানে জেলার বাছাই নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অনুব্রতহীন বীরভূমের কোর কমিটির সদস্যা সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে সাত করে দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে জায়গা পান দুই সাংসদ অসিত মাল ও শতাব্দী রায় এবং অনুব্রতের বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত কাজল শেখ। অস্বস্তির শুরু সেদিন থেকেই।
ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ জেলা কমিটির বৈঠকের আগে কেন কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হল না সেই ক্ষোভে বৈঠক ছেড়ে কাজল শেখের বেরিয়ে যাওয়ায় কম বিতর্ক হয় নি। তার পরদিনই জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে জেলবন্দি অনুব্রতর (তখনও আসানসোল সংশোধনাগারে বন্দি তিনি) সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। নানুরের উচকরণ বাসস্ট্যান্ডে দলীয় একটি কর্মসূচির পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে কাজলের মন্তব্য ছিল, ‘‘বিকাশ রায়চৌধুরী বলেছেন, উনি কেষ্টদার পরামর্শ মতো চলছেন। বিকাশদার সঙ্গে কেষ্টদার সঙ্গে হয়তো ফোনে কথাবার্তা হচ্ছে। তাঁর ফোন দেখলে বোঝা যাবে।’’
সূত্রের খবর, কাজলের ওই মন্তব্য নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছিল দল। প্রশ্ন উঠেছিল, দলে কেউ তাঁকে (কাজলকে) ইন্ধন দিচ্ছেন না তো? দল সূত্রে খবর, অস্বস্তি এতটাই বেড়েছিল যে বিধানসভা অধিবেশনের শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকাশ রায়চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে মানলেও কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি বিকাশ।
সেদিনের পর থেকে দলের নেতাদের প্রকাশ্যে অস্বস্তিতে না ফেললেও কেন কোর কমিটির বৈঠক হচ্ছে না, তাঁকে কেন মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ রয়েছে কাজল শেখের। সেই কথাই কি ফিরহাদ হাকিমকে জানাতে গিয়েছিলেন? কাজলের জবাব, ‘‘বাড়িতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য বাজার করতে গিয়েছিলাম। কলকাতা পুরসভায় ববিদা ছিলেন তাই গিয়েছি। আমাদের চলার পথ, কী প্রক্রিয়া স্বভাবতই তাঁকে জানিয়েছি আমি।’’
তবে কোর কমিটির আরেক সদস্য বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সুপ্রিমো একটা কোর কমিটি ঠিক করে গিয়েছিলেন। তিনি নিজে জেলা দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’’ ওই সদস্য জানান, কথা ছিল কোর কমিটি সাতদিন পর পর নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনা করবে। সমস্যা হলে সেটা ফিরহাদ হাকিমকে জানানো হবে। কিন্তু দেড় মাসের মধ্যে কোর কমিটির বৈঠক হয়নি বলে জানান কমিটির ওই সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘আলোচনার বিষয় ঠিক না করে কীভাবে জেলা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়? স্বাভাবিকভাবেই কাজল শেখের অন্য কিছু মনে হতেই পারে।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কোর কমিটির বৈঠক দিন কয়েকের মধ্যেই হবে। তখনও তিনি নিশ্চয়ই থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy