ফাইল চিত্র।
রাজ্য চালাচ্ছেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কাজে মহিলা মুখ তুলে আনায় গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার গঠনের পরে, পঞ্চায়েত স্তরে অর্ধেক মহিলা সদস্য রাখার নিয়ম হয়েছে। কিন্তু বহু পঞ্চায়েতে মহিলা সদস্য প্রধান হলেও, কার্যত ছড়ি ঘোরাচ্ছেন উপপ্রধান বা শাসক দলের স্থানীয় নেতা— এমন নালিশের শেষ নেই। আবার, নেতার স্ত্রী হওয়ার সুবাদে খাতায়-কলমে প্রধান হলেও, আদতে কাজ চালাচ্ছেন ওই নেতাই— সে অভিযোগও আছে। ফলে, নারীর ক্ষমতায়ন সত্যি কতটা হয়েছে, প্রশ্ন রয়েছে।
আসন সংরক্ষণের কারণে পদে বসলেও, মহিলা প্রধান কাজকর্ম চালাচ্ছেন অন্য কারও ‘সাহায্য’ নিয়ে, এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের কম নয় বলে দাবি প্রশাসনের অনেক কর্তার। বহু ক্ষেত্রে, মহিলার স্বামী বা উপপ্রধানই এলাকায় ‘প্রধানের’ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তাঁদের ‘সাহায্য’ ছাড়া, কাজ চালানো মুশকিল, এমনই দাবি করছেন অনেক মহিলা প্রধান।
বাঁকুড়ার তালড্যাংরা পঞ্চায়েতে প্রধান পদ ২০১৮ সালে মহিলা সংরক্ষিত হয়। বেশ কয়েক বারের পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের ফুলমণি মান্ডিকে সে পদে বসানো হয়। তিনি প্রধান হলেও, উপপ্রধান শিবপ্রসাদ মাজিই কাজ চালান বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। ফুলমণি বলেন, ‘‘আমি সই করা ছাড়া, বিশেষ কিছু জানি না। উপপ্রধান-সহ বাকিরা কাজে সাহায্য করেন।’’ উপপ্রধানেরও দাবি, ‘‘প্রধান পড়াশোনা ভাল না জানায়, আমাকেই কাজকর্ম দেখতে হয়। প্রকল্প পরিদর্শনে গেলেও, সঙ্গে আমাকে যেতে হয়।’’ এত দিন প্রধান পদে থাকলেও, ফুলমণি কাজকর্ম বুঝে নেননি কেন, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। উল্টে, প্রধানের ‘নির্ভরশীল’ হয়ে থাকা এলাকার উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে বলে দাবি তাঁর নিজের গ্রাম পাকুড়ডিহার বাসিন্দাদের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে যে সদস্যের জোর বেশি, তাঁর এলাকায় তত কাজ হয়। অন্য নানা গ্রামে রাস্তা, আবাস যোজনার ভাল কাজ হলেও, পাকুড়ডিহায় সে গতি নেই বলে দাবি তাঁদের। এমনকি, ফুলমণির চার ভাইও এখনও আবাস যোজনার বাড়ি পাননি। ফুলমণির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘গ্রামে অধিকাংশ রাস্তা ঢালাই হয়েছে। বাকিটাও হবে। ভাইয়েরা নিয়ম অনুযায়ী, বাড়ি পাবে।’’
বাঁকুড়ারই ইঁদপুর ব্লকের হাটগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান কবিতা লায়েক অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক অবধি পড়াশোনা করেছেন। তাঁর স্বামী আনন্দ লায়েক ওই পঞ্চায়েতে দু’বার উপপ্রধান ছিলেন। ২০১৮ সালে আনন্দ ও কবিতা, দু’জনই ভোটে জেতেন। সে বার প্রধান পদটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায়, কবিতা প্রধান হন। বাসিন্দাদের কেউ-কেউ আড়ালে বলেন, আনন্দবাবুর প্রধান না হওয়ার অপূর্ণতা তাতেই পূরণ হয়েছে। বিরোধীদেরও দাবি, কবিতা নামেই প্রধান। পঞ্চায়েতের যাবতীয় সভা, বাজেট বা পরিকল্পনার মতো জায়গায় মুখ্য ভূমিকায় থাকেন আনন্দবাবুই। কবিতা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘গোড়ায় স্বামীর সাহায্য নিলেও, এখন একাই কাজ সামলাই।’’ আনন্দবাবুও সায় দেন, ‘‘স্ত্রী সংসার, পঞ্চায়েত সবই সামলাচ্ছে।’’
পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের বুড়িবাঁধ পঞ্চায়েতে গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে, রাজবালা সিং সর্দারকে প্রধান করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজবালা জানান, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিয়ে হওয়ায়, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে বুড়িবাঁধের বারিডি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি চলে আসেন। মাধ্যমিক আর দেওয়া হয়নি। তাঁর স্বামী সুভাষচন্দ্র সিং সর্দার স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, রাজবালা প্রধান হলেও, কাজকর্মে ভরসা সুভাষচন্দ্রই। কিছু দিন আগে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, রাজবালার সঙ্গে কাজ সামলাচ্ছেন তাঁর স্বামীও। রাজবালার বক্তব্য, ‘‘এত কাজ! একা কত সামলাব? স্বামী ও অন্য পঞ্চায়েত সদস্যেরা সাহায্য করেন।’’ সুভাষচন্দ্রের সাফ কথা, ‘‘মহিলাদের পক্ষে প্রধান পদ সামলানো অসুবিধার। ঘরের কাজ করে অফিসে যাওয়া, আবার ফিরে এসে সংসার সামলানো— খুবই মুশকিল। তাই স্ত্রীর সঙ্গেই থাকতে হয় আমাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy