রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রেলপথ আটকে। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুৎকেন্দ্রে জমিদাতা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের দাবিতে এক সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনে নামল ‘আরটিপিএস দুমদুমি ল্যান্ড লুজার্স অ্যান্ড লোকাল অ্যাসোসিয়েশন’ নামের তৃণমূল প্রভাবিত এক সংগঠন। সোমবার কর্মসূচির প্রথম দিনে ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢোকার সাতটি গেটই আটকে দেন সংগঠনের সদস্যেরা। অবরোধ হয় রেললাইনও।
অবরোধের জেরে এ দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি কর্মী ও ঠিকা-শ্রমিকেরা। কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসার রাস্তায় আটকে পড়ে মালগাড়ি। সংগঠনের সম্পাদক ইসমাইল আনসারি জানান, আগামী এক সপ্তাহ ধরে দিনরাত তারা কর্মসূচি চলবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প আধিকারিক চৈতন্যপ্রকাশের আশঙ্কা, সাত দিন কর্মসূচি চললে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
ওই কেন্দ্রে জমিদাতা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের দাবিতে বারেবারেই আন্দোলনে নামতে দেখা গিয়েছে একাধিক সংগঠনকে। তবে একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাতটি গেট ও রেললাইন আটকে বিক্ষোভ-অবস্থানের ঘটনা আগে হয়নি। বিক্ষোভকারী সংগঠনের অভিযোগ, অতীতে জমিদাতা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের দাবিতে একাধিক বার বিক্ষোভ-অবস্থান হয়েছে। প্রতি বার আলোচনায় আরটিপিএস কর্তৃপক্ষ জমিদাতা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিলেও তা পূরণ হয়নি। ইসমাইলের দাবি, ”অতীতে কর্মসংস্থান নিয়ে ডিভিসির সঙ্গে জমিদাতাদের চুক্তি হয়েছে। পরে আরটিপিএস কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাসও দেন। তবে কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। বাধ্য হয়ে আমাদের সাত দিনের টানা আন্দোলনের কর্মসূচি নিতে হয়েছে।”
তবে আন্দোলন টানা চললে উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, বর্তমানে দৈনিক ২২-২৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় আরটিপিএসে। তার জন্য দৈনিক প্রয়োজন হয় গড়ে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টন কয়লা। চারটি মালগাড়িতে সেই কয়লা আসে। এ দিন রেললাইনে অবরোধের জেরে সাড়ে তিন হাজার টন কয়লা এসেছে। চৈতন্যপ্রকাশ বলেন, ‘‘কিছু কয়লা মজুত আছে। তাতে হয়তো উৎপাদন চলবে। তবে টানা আন্দোলন চললে কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।”
ঘটনা হল, নানা সমস্যা কাটিয়ে সম্প্রতি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আরটিপিএসের সঙ্গে ‘পিপিএ’ (পাওয়ার পারচেজিং এগ্রিমেন্ট) হয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যের। চৈতন্যপ্রকাশ বলেন, ”সোমবার কোনও কর্মী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। আগের রাতে কাজ করা কর্মীদের ‘ওভারটাইম’ করিয়ে উৎপাদন বজায় রাখা হয়েছে। তবে তাঁদের পক্ষেও এক টানা কাজ করা সম্ভব নয়।” তাঁর সংযোজন, “আরটিপিএস থেকে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই অবস্থা চললে ওই রাজ্যগুলিতে বিদ্যুৎ সঙ্কট তৈরি হতে পারে।”
বিক্ষোভকারীদের দাবি নিয়ে প্রকল্প অধিকর্তার বক্তব্য, ”বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপারেশন ও মেইন্টেনেন্সের কাজে যুক্ত ১,১০০ অদক্ষ শ্রমিকের মধ্যে ৯০ শতাংশই স্থানীয় ও জমিদাতা মানুষজন। এ ছাড়া, কেন্দ্রের নির্মাণকাজে প্রয়োজন হলেই প্রতিদিন বহু সংখ্যক শ্রমিক স্থানীয়দের মধ্যে থেকেই নিয়োগ করে ঠিকাদার সংস্থাগুলি। তাই জমিদাতাদের কর্মসংস্থান না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”.
এর পাশাপাশি, রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ শুরুর মুখে। এই ধরনের আন্দোলনে তাতেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। চৈত্যনপ্রকাশ বলেন,”শিল্পের জন্য সহযোগিতামূলক পরিবেশ প্রয়োজন। না হলে নেতিবাচক বার্তা যায়।” তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবে দাবি, ”মানুষের জন্যই শিল্প। শিল্পের জন্য মানুষ নয়। যাঁদের জমিতে কারখানা গড়ে উঠল, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ডিভিসি কর্তৃপক্ষ করবেন না, এটা সমীচীন নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy