E-Paper

হারের নেপথ্যে অন্তর্ঘাত! চর্চা শাসকের বৈঠকে

ইতিমধ্যে এই লোকসভা আওতায় থাকা বিভিন্ন ব্লক ও শহর কমিটির সভাপতি এবং জেলা তৃণমূলের প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট জমা পড়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে।

জেলা তৃণমূলের বৈঠক, পুরুলিয়ার একটি হোটেলে।

জেলা তৃণমূলের বৈঠক, পুরুলিয়ার একটি হোটেলে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫১
Share
Save

তৃণমূলের শাখা সংগঠনগুলির ভূমিকা, সমন্বয়ের অভাব, বুথস্তরে নিষ্ক্রিয়তা, জনপ্রতিনিধিদের জনবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি অন্তর্ঘাতও পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। বুধবার এমনই নানা বিষয় উঠে এসেছে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের জেলা কমিটির পর্যালোচনা বৈঠকে।

ইতিমধ্যে এই লোকসভা আওতায় থাকা বিভিন্ন ব্লক ও শহর কমিটির সভাপতি এবং জেলা তৃণমূলের প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট জমা পড়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। দলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক তন্ময় ঘোষ অন্তর্ঘাত প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কিছু ত্রুটি আমাদের নজরে এসেছে। দলের কাছে পেশ করা রিপোর্টে সবই জানানো হবে। রিপোর্ট মোতাবেক রাজ্য নেতৃত্ব নিশ্চয় পদক্ষেপ করবেন।’’

গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া কেন্দ্রে পরাজয়ের নেপথ্যে দলীয় অন্তর্ঘাত ছিল বলে রাজ্য নেতৃত্বকে রিপোর্ট দিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটেও সেই অভিযোগ সামনে আসায় দল অস্বস্তিতে। ঘটনাচক্রে এ দিনের বৈঠকে গরহাজির থেকে বিতর্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো, লোকসভার নির্বাচনী কোর কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সংগঠনের সভাপতিরা। ইচ্ছাকৃত ভাবেই কি তাঁরা বৈঠক এড়ালেন? এই বিভাজনের প্রভাবই পড়েছে ভোটে?

বৈঠকের পরে দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক নেতা লেখেন, ‘আজকের বৈঠকে কিছু মঞ্চপ্রেমী নেতা-নেত্রী ও অনেক শাখা সংগঠনের প্রধানদের দেখতে পেলাম না। এর কারণ কী হতে পারে? লোকসভা নির্বাচনে হারের লজ্জা অথবা নিজের পদমর্যাদা অনুযায়ী কাজ না করার গ্লানি? জেলা তৃণমূলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে আমি মনে করি অবিলম্বে পুরুলিয়া জেলা কমিটিতে বড় রদবদলের প্রয়োজন রয়েছে। মঞ্চে ওঠা তথাকথিত নেতাদের বাদ দিয়ে কাজের নেতাদের স্থান দিন। আগামী দিনে সংগঠন আপনা থেকেই ভাল হয়ে যাবে।’ এই পোস্টের পরেই বিতর্কের ঝড় ওঠে সংশ্লিষ্ট গ্রুপে।

সূত্রের দাবি, বৈঠকে জেলার এক শীর্ষ নেতা দাবি করেন, অন্তর্ঘাতে যুক্তদের চিহ্নিত করে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই ধরনের পর্যালোচনা বৈঠকের মানে কী? বুথস্তরের কর্মীদের কাছে আর্থিক সহায়তা না পৌঁছনোর অভিযোগও ওঠে। এক নেতা বৈঠকে এই অভিযোগে সরব হয়ে ব্লক সভাপতিদের কাছে জানতে চান, ‘আপনারাই হাত তুলে বলুন, আপনাদের কাছে ন্যূনতম অর্থ কি পৌঁছেছিল?’ যদিও বুথস্তরে অর্থিক সহায়তা না পৌঁছনোর অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো।

বৈঠক শেষে দলের রাজ্য নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘শান্তিরাম মাহাতো বর্ষীয়ান নেতা। সবে একটা লড়াই শেষ করেছেন। তিনি একটু বিরতি চাইছেন। দ্রুতই তিনি ময়দানে ফিরবেন। সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো কোথাও অন্য কাজে আটকে পড়েছেন। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।’’

প্রার্থী শান্তিরাম বলেন, ‘‘আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলেই বৈঠকে যাইনি। অন্তর্ঘাতের বিষয়টি যখন উঠে এসেছে, দলের গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত।’’ বর্ষীয়ান নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিনের বৈঠকের বিষয় ‘সাংগঠনিক’ বলে উল্লেখ ছিল। সাংগঠনিক এই সভা ভোটের আগে হওয়া উচিত ছিল। তাই যাইনি। যদি একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি বা ফলাফল পর্যালোচনার বিষয় উল্লেখ থাকত, নিশ্চয় যেতাম। ’’

তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আমি সুজয়বাবু-সহ একাধিকা নেতাকে ফোন করে বৈঠকের কথা জানাই। তবুও কেন তাঁরা গরহাজির থাকলেন, স্পষ্ট নয়। যাইহোক আমি নিজে সুজয়বাবুর সঙ্গে কথা বলব।’’ দলের বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বীকারোক্তি, ‘‘দলের অন্দরে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে। যা বাঞ্ছনীয় নয়।’’

বৈঠকে এক রাজ্য নেতা পুরুলিয়ার পুর-প্রতিনিধিদের বলেন, ‘কেন পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে ২২ হাজারের বেশি ভোটে হারতে হবে? আত্মসমালোচনা করুন।’

কাঠগড়ায় উঠেছে সংখ্যালঘু শাখার সাংগঠনিক কাজকর্মও। ওই রাজ্য নেতা জানান, পাড়ায় দলনেত্রী সভা করে যাওয়ার পরেও কী ভাবে ওই বিধানসভায় দলকে এত ভোটে হারতে হল? বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী সন্ধ্যারাণি টুডু, বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন, রাজ্য সম্পাদক স্বপন বেলথরিয়া, সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো,
জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো প্রমুখ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

tmc meeting review meeting purulia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।