প্রতীকী ছবি।
এক বছর ধরে চলা টানাপড়েন শেষে ‘টাই’ হওয়া মহম্মদবাজারের রামপুর পঞ্চায়েতে গেল তৃণমূলের দখলে।
এক বছর প্রতীক্ষার পরে শুক্রবার বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া ছিল ওই পঞ্চায়েতে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মহম্মদবাজারের যুগ্ম বিডিও কমলেশ মহান্তির উপস্থিতিতে, দু’পক্ষেরই এক এক জনের নাম প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করে ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। সেখানে ৩-৩ ভোটে ‘টাই’ হওয়ায় পরে লটারি করা হয়। লটারিতে জিতে রামপুর পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। প্রধান হলেন সরস্বতী হাঁসদা। উপপ্রধান সুধাময় দাস।
এত দিনের উৎকন্ঠা কাটিয়ে তাদের দলের অনুকূলে ওই পঞ্চায়েত আসায় খুশি তৃণমূল শিবির। অন্য দিকে কিছুটা হলেও মুষড়ে পড়েছে বিজেপি শিবির। অন্য দিকে এত দিন পর রামপুরে বোর্ড গঠনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রশাসনও।
এ নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘লোকসভা, বিধানসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব জায়গাতেই আমরা ক্ষমতায়। রামপুর গ্রামপঞ্চায়েতও এ বার এল। খুশি হয়েছি।’’
অন্য দিকে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে, টাকা দিয়ে কোথাও ক্ষমতা দখলের পথে বিজেপি নেই। সেই চেষ্টাও করিনি। রামপুরে টসে জিতে শাসকদল বোর্ড গঠন করেছে। ইতিবাচক পদক্ষেপের পাশে আছি। তবে উন্নয়নে পক্ষপাতিত্ব করলে প্রতিবাদ করব। তবে পঞ্চায়েতের ৬টি আসনের ৩টিতে শুধু নয়, পঞ্চায়েত সমিতির দু’টি আসনে কিন্তু আমরাই এগিয়ে।’’
নতুন প্রধান সরস্বতী হাঁসদা বলেছেন, ‘‘দলের সঙ্গে পরামর্শ করে, এলাকার সকলের ভালর জন্য কাজ করতে চাই।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মল্লারপুর ১ ও মহম্মদবাজার ব্লকের গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি পেয়েছিল শাসকদল। অস্বস্তি ছিল ৩-৩ আসনে টাই হওয়া মহম্মদবাজারের রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘টস’ কার অনুকূলে যায় অপেক্ষা না করে বিপক্ষের প্রার্থীকে নিজের ঘরে ‘তুলে’ পঞ্চায়েতের দখল নিতে উঠেপড়ে লেগেছিল যুযুধান তৃণমূল-বিজেপি। তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোয় গত বছর ২৮ অগস্ট, ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর বোর্ড গঠনের দিন ধার্য করেও শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাজনিত কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে প্রশাসন।
বিজেপির অভিযোগ ছিল, শেষ মূহুর্তে বোর্ড গঠন পিছিয়ে দেওয়া আসলে অজুহাত। বিজেপি না ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে— শাসকদলের এই আশঙ্কার জন্যই জেলা প্রশাসন এত নিষ্ক্রিয় ছিল। যদিও ওই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়নি প্রশাসন।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বিজেপির দুই নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য বোলপুরে গিয়ে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’দিন পরেই তাঁরা বিজেপিতে ফিরে এসে বলেন— ‘‘দল ছেড়ে ভুল করেছিলাম’’। লোকসভা নির্বাচনের ঘন্টা বেজে যাওয়ায় এর পরে রামপুর নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি প্রশাসন।
কেন প্রশাসনিক টালবাহানায় রামপুর পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করা হচ্ছে না প্রশ্ন তুলে এবং দ্রুত বোর্ড গঠনের আর্জি নিয়ে মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর মহকুমা) রাজীব মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপি প্রতিনিধিদল। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তাঁদের আবেদন ছিল— ‘‘যে দলের বোর্ডই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাকে আসতে দেওয়া হোক। কিন্তু ওই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। তা না হলে গোটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। থমকে গিয়েছে উন্নয়নের কাজ।’’ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আশ্বস্ত করেছিলেন মহকুমাশাসক। তার পরেই মহম্মদবাজরের বিডিও আশিস মণ্ডল বোর্ড গঠনের জন্য দিন ঠিক করেন।
কার অনুকূলে বোর্ড যায় তা জানতে এ দিন দু’পক্ষেই উত্তেজনা চরমে ছিল। বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কালোসোনা মণ্ডল। অন্য দিকে তৃণমূলের মহম্মদবাদার ব্লক সভাপতি তাপস সিংহ এবং দলীয় নেতা কালী বন্দ্যোপাধ্যায়েও সেখানে ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে তৈরি ছিল পুলিশ। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয় পঞ্চায়েত কার্যালয়ের আশপাশে। ২০০ মিটারের মধ্যে কাউকেই ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, বিডিও-র প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম বিডিও আসেন সেখানে। পঞ্চায়েত কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি ছিল শুধু নির্বাচনে জিতে আসা দু’দলের ৬ প্রতিনিধির। তাঁরা হলেন তৃণমূলের সরস্বতী হাঁসদা, সুধাময় দাস, বিমল সাহা এবং বিজেপির টিকিটে জেতা জপন মুখোপাধ্যায়, সুলতা কোঁড়া ও বন্দনা রায়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে সরস্বতী হাঁসদা ও জপন মুখোপাধ্যায়ের নাম প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করে ব্যালটে ভোট করা হয়। তাতে ফল ‘টাই’ হলে একটি
বাচ্চাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে লটারি করা হয়। সরস্বতীদেবীর নাম প্রধান হিসেবে উঠে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy