দাবিদাওয়া: পঞ্চায়েত ঘেরাও বিজেপির। শ্রীনিধিপুরে। নিজস্ব চিত্র
বিকেলে ঝামেলা হয়েছিল ২ নম্বর সংসদে। রাতে হল ১ নম্বর সংসদে। কাটমানি ফেরতের দাবিতে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হল সাঁইথিয়ার ভালদহ গ্রাম। সোমবার রাতের ঘটনার রেশ ছিল মঙ্গলবার সকালেও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে ভালদহ গ্রামের ২ সংসদে তৃণমূল বুথ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি বাপি দেবনাথের বাড়ির সামনে আবাস যোজনা, শৌচাগার নির্মাণ এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগ, টাকা ফেরত না পেয়ে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে মারতে মারতে পঞ্চায়েতে অফিসের সামনে নিয়ে যান। বাপিবাবুকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশও। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরতের মুচলেকা দিয়ে রেহাই পান তিনি। ওই ঘটনার পর পরই রাত ৮টা নাগাদ ফের উত্তেজনা ছড়ায় ওই গ্রামে। গ্রামের ১ নম্বর সংসদে তৃণমূল বুথ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল ও তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত হরিচরণ মণ্ডলের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সাত দিন আগে ‘কাটমানি’ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল সন্তোষবাবুর। কিন্তু দু’জনেরই দেখা মিলছে না। সোমবার রাতেও তাঁরা কেউ বাড়ি থেকে বেরোননি। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশও বিক্ষোভের মুখে পড়ে।
সন্তোষবাবুরা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, ‘‘কাটমানি নয়, দলের নেতাদের নির্দেশে দলীয় অফিস তৈরির জন্য এক-দু’হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছিল। এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে আমাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’ একই দাবি করেছেন ২ নম্বর সংসদের বুথ কমিটির সভাপতি বাপি দেবনাথও।
দলের অন্দরমহলের খবর, ওই এলাকায় সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের সঙ্গে জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীবিবাদ দীর্ঘদিনের। বাপিবাবু, সন্তোষবাবুরা সাধনবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, সাবের আলির অনুগামীরাই ওই বিক্ষোভে পরোক্ষে ‘ইন্ধন’ জোগাচ্ছেন।
সাবের আলি খান অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগে দু’বছর আগেই ওঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওঁরা এখন বিজেপি করছেন। বিপাকে পড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দোহাই দিচ্ছেন। আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।’’ বিজেপির সাঁইথিয়া মণ্ডল কমিটির সভাপতি ভবানীশঙ্কর পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা দুর্নীতির দায় এড়াতে ওঁদের নেতাদের আমাদের দলের লোক বলে দাবি করছেন। কিন্তু ওঁরা কেউ-ই বিজেপির কেউ নন।’’
সাধনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা কাটমানি নিয়েছেন বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন কিনা বলতে পারব না, কিন্তু ওঁরা আমাদের দলেরই কর্মী ছিলেন, এখনও তাই রয়েছেন।’’
অন্য দিকে মঙ্গলবার সাঁইথিয়ার ফুলুর পঞ্চায়েতের নেতুর গ্রামে তৃণমূলের বুথ কমিটির সদস্য হারু মার্ডি ও মাগারাম মুর্মূকে কাটমানি ফেরতের দাবিতে গ্রামবাসীদের একাংশ মারধর করেন বলে অভিযোগ। হারুবাবু অবশ্য কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ মানেননি৷ কিছুদিন আগে লাগোয়া নবগ্রামেও কাটমানি ফেরতের দাবিতে তৃণমূলের এক নেতাকে মারধোরের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাচক্রে ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে বিজেপি মিথ্যা অভিযোগে আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা করাচ্ছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে ভবানীবাবু বলেছেন, ‘‘যে সব গরিব মানুষের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তাঁদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা কোনও হামলায় ইন্ধন জোগাচ্ছি না।’’
অন্য দিকে, রাস্তা সংস্কার, পানীয় জল, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের হিসেব, বাড়ি তৈরির অনুদান, ১০০ দিনের কাজ, শৌচাগার নির্মাণে দুনীতির অভিযোগ সহ ১৩ দফা দাবিতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। মঙ্গলবার বিজেপির সাঁইথিয়া মণ্ডল কমিটির পক্ষ থেকে তৃণমূল পরিচালিত শ্রীনিধিপুর পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মণ্ডল কমিটির সভাপতি রামপ্রসাদ মণ্ডলের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান দোদন দাস অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy