(বাঁ দিক থেকে) সৌরভ মিত্র, জয়দেব দত্ত ও রামকৃষ্ণ মাঝি। নিজস্ব চিত্র
কেউ শারীরিক কেউ বা মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোটবেলা থেকে লড়াই করে এগিয়ে আসতে হয়েছে। তবুও তারা হাল ছাড়েনি। অনমনীয় মনোভাবের জেরে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসেছে তারা। নানুর থানা এলাকার এই তিন লড়াকুর নাম জয়দেব দত্ত, রামকৃষ্ণ মাঝি এবং সৌরভ মিত্র।
নানুরের বাসিন্দা জয়দেব মূক এবং বধির। তিন বছর বয়সে তার এই প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ে। অনেক চিকিৎসার পরেও কিছু হয়নি। সবাই তার লেখাপড়ার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। কিন্ত হাল ছাড়েনি জয়দেব। সিউড়ির মূক এবং বধির স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে ভর্তি হয় নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বারে ওই বিদ্যালয় থেকে স্থানীয় বেলুটি হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। জয়দেবের বাবা স্বপন দত্ত পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে ওকে। রাইটার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুর হয়নি। কে জানে কেমন করবে।’’
ছ’মাস বয়সে নিউমোনিয়ায় মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় স্থানীয় কুমিড়া গ্রামের সৌরভ মিত্র। সেও এ বার নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বেলুটি হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র পরীক্ষা দিচ্ছে। বছর দেড়েক আগে বাবা মারা গিয়েছে তার। দিদি মৌমুমী স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ। সৌরভ অবশ্য রাইটার পেয়েছে। তার মা জ্যোস্না মিত্র বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতার কারণে স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পরে পড়তে পারেনি। তখনই পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। শেষে নানুর হাই স্কুলে ভর্ভি করি। দিদির কাছে পড়েই, আজ ও মাধ্যমিকে বসছে।
নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই পরীক্ষায় বসছে বেরুগ্রামের রামকৃষ্ণ মাঝি। সেও ছোট থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী। সেও রাইটার পেয়েছে। তার বাবা নীলকুমার মাঝি পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনার ব্যাপারে আমরা তো হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম। শিক্ষকদের উৎসাহ এবং মনের জোরে ও পরীক্ষা দিচ্ছে।’’
তিন লড়াকু কথায় মনের ভাব কথায় প্রকাশ করতে না পারলেও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়, সহজে হাল ছাড়তে রাজি নয় তারা। নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা জয় করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসায় ওদের জন্য আমরা গর্বিত। ওদের অনমনীয় মনোভাব অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy