Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC

সংঘর্ষে সামনে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব

বোমাবাজি ও খুনের ঘটনায় পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার ধৃতদের সিউড়ি জেলা বিশেষ আদালতে তোলা হয়।

ত্রস্ত: (বাঁ দিকে) গ্রামে বোমাবাজির চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক বাসিন্দা। (ডান দিকে) থমথমে গ্রােম পুলিশি টহল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ত্রস্ত: (বাঁ দিকে) গ্রামে বোমাবাজির চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক বাসিন্দা। (ডান দিকে) থমথমে গ্রােম পুলিশি টহল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ     
তালিবপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:১২
Share: Save:

গ্রামের হাইস্কুলে কোয়রান্টিন কেন্দ্র করাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে দু’দল গ্রামবাসীর বোমা-গুলির লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল পাড়ুই থানার তালিবপুর। সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক গ্রামবাসীর। এই ঘটনার জন্য বিজেপি-কে দায়ী করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বিজেপি অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছে।

বোমাবাজি ও খুনের ঘটনায় পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার ধৃতদের সিউড়ি জেলা বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী অসীম কুমার দাস জানান, পুলিশের তরফ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়েছে। খুন, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা মজুত-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে। বিচারক ওই সাত জনকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে সিউড়ি ২ ব্লকের তালিবপুর গ্রামের হাইস্কুলের হস্টেলে প্রশাসনের তরফ থেকে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করার কথা ছিল। সেই মতো ওই দিন গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রশাসনিক কর্তারা। গ্রামবাসীদের একাংশ কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়ে তোলায় আপত্তি জানান। আর এক দল কেন্দ্র গড়ার পক্ষে ছিলেন। প্রশাসনিক কর্তারা গ্রাম ছেড়ে যেতেই দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বোমা ও গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শেখ শ্যামবাবুর। গুলিবিদ্ধ হন ওই গ্রামেরই বছর একুশের তরুণ শেখ মহিবুর। তিনি স্থানীয় সুলতানপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামবাবুর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বোলপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের পর থেকেই এলাকায় পুলিশের টহলদারি চলছে। রবিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, থমথমে পরিবেশে ইতিউতি গ্রামবাসীর জটলা। আর অশান্তি যাতে না হয়, তার জন্য গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। রাস্তার চতুর্দিকে গুলির খোল ও বোমার পোড়া সুতলি পড়ে আছে।

গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, সংঘর্ষের নেপথ্যে কোয়রান্টিন কেন্দ্র উপলক্ষ মাত্র। এর পিছনে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। স্থানীয় সূত্রের খবর, তালিবপুরের বর্তমান তৃণমূল বুথ সভাপতি আব্দুল হাই-এর গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিবাদ প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মোজাম্মেলের অনুগামীদের। শনিবার তালিবপুর গ্রামে প্রশাসনের তরফ কোয়েন্টিন সেন্টার গড়ে তোলার কথা বলা হলে মোজাম্মেল-গোষ্ঠী সহ বেশ কিছু গ্রামবাসী আপত্তি তোলেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, গ্রামের এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে তা থেকে করোনা-সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অন্য দিকে, আব্দুল হাই গোষ্ঠী কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়ার পক্ষে সওয়াল করে।

সেই নিয়েই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। নিহত শ্যামবাবুর মা সরিনা বিবির অভিযোগ, “গোটা গ্রামের লোকেদের সঙ্গে আমার ছেলেও বলেছিল, গ্রামে কোয়রান্টিন কেন্দ্র না হলেই ভাল হয়। এই আক্রোশ থেকেই সিভিক পুলিশ দিয়ে বাড়ি থেকে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আব্দুল হাই গোষ্ঠীর লোকেরা বোমা ও গুলি মারে। আমি চাই দোষীদের চরম শাস্তি হোক।’’ গ্রামবাসী আনারুল হক, শেখ বজলুর রহমানরা বলেন, “আমরাও কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বুথ সভাপতির দলবল তা মেনে নেয়নি। এর পরেই ওরা গ্রামবাসীদের উপরে হামলা চালায়।’’

ঘটনার পর থেকেই আব্দুল-গোষ্ঠীর লোকেরা গা-ঢাকা দিয়েছে। আব্দুল হাই-এর সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সিউড়ি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, “কিছু লোক গ্রামে কোয়ারান্টিন সেন্টার গড়া মানতে চাইছিলেন না। প্রশাসনের লোকজন গ্রামে গিয়ে কথাও বলেন। যে ঘটনা ঘটেছে, অত্যন্ত নিন্দাজনক।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, আমার জানা নেই। তবে সত্যিই যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে আইন আইনের পথে চলবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Coronavirus Quarantine Center Parui
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy