এক তলা ডুবেছে কুঁয়ে নদীর জলে। ছাদেই আশ্রয় পরিবারের। লাভপুরের বলরামপুর গ্রামে মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর নদীর বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় ঘর, গবাদি পশু। তলিয়ে যায় মাঠের ফসল। ত্রাণ সামগ্রী এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ যা সরকারি অনুদান মেলে তাতে সব দিক সামাল দেওয়া যায় না। ধার করে নতুন ভাবে ঘরসংসার পাততে হয়। কিন্তু পরের বছর আবার বন্যায় ফের সব বেসামাল হয়ে যায়। ঘাড়ের উপরে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। তাই লাভপুরের বন্যাপ্রবণ এলাকার বাসিন্দারা ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ নয়, চাইছেন উন্নত প্রযুক্তির নদীর বাঁধ নির্মাণ।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, কুঁয়ে নদীর নিম্নগতিতে এবং উজানে আসা লাঙ্গলহাটা বিলের জল লাভপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার দুর্ভোগের কারণ। প্রায় প্রতি বছর কোথাও না কোথাও নদীর বাঁধ ভেঙে ঠিবা, কুরুন্নাহার, জামনা, ইন্দাস প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা হয়। এ বারও মাসখানেক আগে ঠিবা এবং খাঁপুরের কাছে নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ১২টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, তখন প্রায় শতাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। তলিয়ে গিয়েছিল মাঠের ফসল।
ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে , ৫,১২৯ হেক্টর জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। তার মধ্যে ২,৯০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে যায়। সোমবার ফের খাঁপুর এবং বলরামপুর ডোমপাড়ার কাছে নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
ব্লক প্রশাসন সূত্র জানা গিয়েছে, ঠিবা, জামনা, কুরুন্নাহার, লাভপুর ১ পঞ্চায়েতের একাংশ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। প্রায় ৭০টি বাড়ির সম্পূর্ণ এবং ১৫০টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সাতটি ত্রাণ শিবিরে ৪৫০টি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন করে ১,৮০০ হেক্টর জমি জলমগ্ন হয়েছে। তার মধ্যে ১,৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান রয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গ্রাম মিরিটি থেকে বলরামপুরের রাস্তা প্রায় একবুক জলের তলায় চলে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেশি।
ফি-বছর বন্যায় নাজেহাল হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার বাঁধ ভেঙে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কাঁদরকুলো ডোমপাড়া। ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন নদীবাঁধের উপরে। একই দুরবস্থা বলরামপুরেরও। সেখানে কেউ টোটো, অটো বা একতলা বাড়ির ছাদের উপরে রয়েছেন। ডোমপাড়ার অরুণ থান্দার, সাগর থান্দার, বলরামপুরের রসিদ শেখ, সামসুল শেখরা জানান, প্রায় প্রতি বছর বন্যায় আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ি। ত্রাণসামগ্রী বা ক্ষতিপূরণ বাবদ যৎসামান্য যা সাহায্যে পাই, তাতে কিছু হয় না। ধারদেনা করে সব করতে হয়। কিন্তু সেই দেনা শোধ হতে না হতে ফের বন্যায় সব ভেসে যায়। তাই আমরা চাই প্রশাসন উন্নত মানের বাঁধ নির্মাণ করুক। যাতে প্রতি বছর দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।
একই দাবি চাষিদেরও। কাঁদরকুলোর সমীর ঘোষ, খাঁপুরের উৎপল মণ্ডলেরা জানান, বিঘে প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে ধান পু্ঁতেছিলাম। মাসখানেক আগে বন্যায় সব পচে যায়। ফের চড়া দামে বাইরে থেকে বীজ কিনে এনে ধান পুঁতেছি। তাও তলিয়ে গিয়েছে। ফসলের ক্ষতি হলে সব সময় ক্ষতিপূরণ মেলে না। আবার মিললেও তা যৎসামান্য। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না, বছর বছর বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে প্রশাসন শক্তপোক্ত বাধ করুক।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মিন্টু শেখ, পঞ্চায়েত সদস্য মহিম মল্লিকেরা জানান , অধিকাংশ বন্যাদুর্গত মানুষজনই চাইছেন মজবুত নদীবাঁধ। স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সেচমন্ত্রীকে মানস ভুঁইয়ার কাছে উন্নত প্রযুক্তির বাঁধ নির্মাণের আর্জিও জানানো হয়েছে।’’
লাভপুরের বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক বলেন, ‘‘ব্লকে ২৪ ঘণ্টার কট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ব্লক প্রশাসন সজাগ আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy