সতর্কতা: বিপত্তি এড়াতে ঘিরে দেওয়া হয়েছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র
শহরে বহুতল গড়তে হলে পুরসভার কাছ থেকে কারিগরি অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু, যে ‘স্বচ্ছতা’র সঙ্গে সেই অনুমোদন নেওয়ার কথা, সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ‘বিপজ্জনক’ বহুতলটির ক্ষেত্রে সেটা নেওয়া হয়েছিল কিনা, সে প্রশ্ন তুলে দিল পুরসভাই। সিউড়ির বর্তমান পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও তা ধরা পড়েছে। উজ্জ্বলবাবু শনিবার বলেন, ‘‘বহুতলটি গড়ার জন্য পুরসভার আগের বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু নথি ঘেঁটে দেখছি, সেটা নিয়ম মেনে হয়নি। পুরসভা সমস্তটা খতিয়ে দেখছে।’’
সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অত্যন্ত ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় ওই বাণিজ্যিক বহুতলের একাংশে দুপুরে ফাটল দেখা দিতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল। এর পরই পুলিশ-প্রশাসন ও পুর কর্তারা ছুটে আসেন। বিকেলে বহুতলের একাংশ ভেঙেও পড়ে। যে কোনও সময় পুরো বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে— এই আশঙ্কায় বহুতলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা নিগমের অফিস, গয়না বিপণি-সহ সমস্ত দোকান-অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
শুধু বিপজ্জনক বহুতলটিই নয়, ১৩৩ ধারা জারি করে বহুতলের একেবারে গা ঘেঁষে থাকা পেট্রল পাম্পটিও ৩০ সেপ্টেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডল। একই ভাবে নোটিস জারি করেছে পুরসভাও। নজর রাখছে পুলিশও। তবে হঠাৎ ব্যাঙ্ক ও বিমার অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাসের প্রথমে বিপাকে পড়েছেন বহু মানুষ।
মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, বিপদ এড়াতেই ১৩৩ ধারা জারি হয়েছে। ওই এলাকায় এখন সব কাজ বন্ধ। বহুতলটি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বহুতলটি সংস্কার করা হবে না ভেঙে ফেলা হবে, তা পুরসভা দেখবে।
এই ঘটনায় এক দিকে যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, অন্য দিকে শহরের এমন ব্যস্ত এলাকায় এ ভাবে একটি বাণিজ্যিক বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ায় তার নির্মাণ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কংক্রিটের কাঠামো থেকে সরে এসে পুরসভার হাইড্রেনের উপরে দেওয়াল তুলে এক ফুট দখল করতে গিয়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে দোতলা ওই বাড়িটিকে চার তলা করার প্ল্যান জমা দেন সেটির মালিক। নিময় অনুয়ায়ী, সেই সময় একটি পুরসভা সর্বোচ্চ ১৪.৫ মিটার (বর্তমানে যা ১৫.৫ মিটার) উচ্চতা সম্পন্ন বাড়ির অনুমোদন দিতে পারত। তার বেশি উচ্চতা সম্পন্ন হলে সেই নকশা পাশ করানোর জন্য পুর-কারিগরি দফতরের (এমইডি) এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের অনুমোদন লাগত। সিউড়ি শহরের এই বাড়ির চার তলা পর্যন্ত করার কারিগরি অনুমোদন দেওয়া ক্ষেত্রে সংশয় থাকায় পুরসভার টেকনিক্যাল স্টাফ, তৎকালীন পুরপ্রধানকে একটি নোট দিয়ে সুপারিশ করেছিলেন বিষয়টি এমইডি-কে পাঠানোর জন্য। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই সব ধাপ এড়িয়ে পুরসভা বহুতলটি গড়ার কারিগরি অনুমোদন দেয় বলে অভিযোগ। পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ জানান, পঞ্চম তলার ক্ষেত্রেও অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি বহুতলের মালিক। সেগুলি হয়তো চাপা থাকত, যদি না বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ত!
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ বহতলের মালিক অরূপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘বিল্ডিং তৈরিতে কোনও আইনগত ক্রটি নেই। নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘আগে বাড়ির বিপজ্জনক অংশ সারানোর অনুমতি দিক প্রশাসন। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তার পরে দেখুক প্রশাসন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy