কোভিড টিকার মহড়া। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র।
টিকা মহড়া শুরু হল সব রকম নিয়ম কানুন মেনে। প্রথমে নথিভুক্ত প্রতিষেধক প্রাপকের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে কি না সেটা পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। পরের ধাপ নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে ‘ওয়েটিং রুম’-এ অপেক্ষা। তারপর ‘ভ্যাকসিনেশন রুমে’ গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়া। শেষধাপ টিকা নেওয়ার পর আধঘণ্টা ‘অবজার্ভেশন রুমে’ পর্যবেক্ষণে থাকা।
দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বীরভূমে দুই স্বাস্থ্যজেলার ৩টি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে ঠিক এভাবেই করোনা প্রতিষধকের ‘ড্রাই রান’ বা টিকা মহড়া চলল শুক্রবার সকালে। দেশ জুড়ে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হবে ইতিমধ্যে। তার আগে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে ফাঁক ফোকর মিটিয়ে নিতে এই কর্মসূচি। দুই স্বাস্থ্য জেলার ছ’টি জায়াগায় ২৫ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে রাখা হয়েছিল টিকা মহড়ায়। একজন ভ্যাক্সিনেটর ও চার জন ভ্যাকসিনেশন অফিসার নিয়ে গঠিত টিম নকল টিকাদানের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু মহড়া ঠিকমত চললেও ত্রুটি দেখা যায় পোর্টালে। এ দিন কো–উইন নামক যে পোর্টাল বা সফ্টওয়ারে আপলোড করার কথা সেই পোর্টালটি সঠিকভাবে কাজ করছিল না। স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছেন। এটি সারিয়ে নেওয়া যাবে।
কেমন চলছে কর্মসূচি সেটা খতিয়ে দেখতে শুক্রবার সেগুলির অন্যতম সিউড়ি জেলা হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্ধারিত গাইড লাইন মেনে সিউড়ি জেলা হাসপাতালের দ্বিতলের তিনটি ঘর নির্দিষ্ট করে মহড়া-টিকা চলছিল। মহড়া টিকার জন্য সেই সময় অপেক্ষায় ছিলেন ওই হাসপাতালের স্টাফ নার্স মন্দিরা কোটাল। জেলাশাসক তাঁর কাছে জানতে চান
ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যপারে তাঁর মনোভাব কী। উত্তরে মন্দিরা জানান, শরীরে সূচ ফোটানো এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া নিয়ে একটা অস্বস্তি আছে। জেলাশাসক তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন কোনও ভয় নেই।
তারপরই জেলাশাসক খতিয়ে দেখেন তালিকায় থাকা একজন ভ্যাকসিন প্রাপকের পরিচয় পত্র কী ভাবে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন ঘরে অপেক্ষা করতে হবে তাঁকে। কোন ঘরে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে কে দিচ্ছেন ভ্যাকসিন। কী ভাবে নির্দিষ্ট পোর্টালে আপডেট করা হচ্ছে ভ্যাকসিন প্রাপকের নথি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পার্শপ্রতিক্রিয়া বা এইএফআই (যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন) হচ্ছে কি না দেখতে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে সবটাই।
ভ্যাকসিনেশন অফিসার তো বটেই জেলাশাসকের সমস্থ প্রশ্নের উত্তর দিতে উপস্থিত ছিলেন বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি, হাসপাতাল সুপার শোভন দে, ডিপিএইচএনও শোভা গুন্ডি সহ একাধিক স্বাস্থ্য আধিকারিক।
শুধু প্রতিষেধকের মহড়া খতিয়ে দেখা নয়, পর্যবেক্ষণ রুমে গিয়ে ব্লাড প্রেসার ও পালস অক্সি মিটার দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও পরীক্ষা করিয়ে নেন জেলাশাসক। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘যথাযথ ব্যবস্থা হয়েছে এখানে।’’
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় সিউড়ি জেলা হাসপাতাল ছাড়াও এ দিন টিকা মহড়া কর্মসূচি পালিত হয়েছে বোলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ এলাকায় সিউড়ি ১ ব্লকের বড়চাতুরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অন্যদিকে, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে, রামপুরহাট শহর লাগোয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং রামপুরহাট ২ ব্লকের বসয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এই মহড়া চলে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তা ও দুই স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকেরা।
সিউড়ি জেলা হাসপাতালে মহড়া টিকাকরণের পাঁচ জনের দলে ভ্যাক্সিনেটর হিসাবে ছিলেন মিতালি কবিরাজ, ভ্যাকসিনেশন অফিসার হিসাবে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা বনশ্রী কবিরাজ, কবিতা পাত্র, উমা আচার্য, কল্যাণী বিশ্বাস গায়েনরাও।
জেলায় প্রথম পর্বে করোনা যোদ্ধা হিসাবে যাঁরা প্রথম সারিতে তাঁদের পরিচয় ইত্যাদি তথ্য ওই সফটওয়্যারের মধ্যে সঞ্চিত। জেলা জুড়ে দুটি স্বাস্থ্য
জেলায় এমন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তাঁদের মধ্যে থেকেই মহড়া টিকাকরণে ২৫ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। টিকা শেষ হলে পরবর্তী ডোজ কবে নিতে হবে, তা-ও ওই সফটওয়্যার জানিয়ে দেবে। সবটাই রিয়েল টাইম এন্ট্রি করার কথা ছিল। যাতে টিকাকরণ শুরুর আগে যাঁর যা দায়িত্ব সেটা যথাযথ ভাবে তাঁরা পালন করছেন বা কোথাও অসুবিধা হলেও সে ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে নজরদারি করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy