শিক্ষককে জড়িয়ে কান্না সহকর্মীর। নিজস্ব চিত্র ।
এ যেন বিয়ের পরে মেয়ের বিদায়বেলার দৃশ্য। শ্বশুরবাড়ি রওনার আগে তাঁকে ঘিরে যেমন কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রিয়জনেরা, তেমনই এক আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সাঁইথিয়ার লহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক মহম্মদ সামাউল ও কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি হয়েছে। তাঁদের বদলির নির্দেশ আসায় শনিবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাঁদের সহকর্মী ও খুদে পড়ুয়ারা।
২০১৪ সাল থেকে ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে ছিলেন সামাউল। স্থানীয় বড়সিজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলির নির্দেশ এসেছে তাঁর। ২০২১ সালে সাঁইথিয়ার লহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন কৌশিক। তিনি অমুয়া-বাগডাঙা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এদিন স্কুলে ছিল তাঁদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সেখানে স্কুলের ১৩৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে হাজির ছিল ১২০ জন। ৩০ জন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীও উপস্থিত ছিলেন। বেশ কিছু অভিভাবকের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ফয়জুর রহমান, শিক্ষাবন্ধু পার্থরঞ্জন মণ্ডল, সমাজকর্মী লালচাঁদ শেখ প্রমুখ। শিক্ষকদের বিদায় মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়ে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী। শিক্ষকদের নিয়ে গাড়ি স্কুল ভবন ছেড়ে রওনা দিলে তারাও পিছনে কাঁদতে-কাঁদতে হাঁটতে থাকে। শেষে দুই শিক্ষক গাড়ি থেকে নেমে স্কুলে মাঝে মধ্যে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে, যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আফরিন সুলতানা, ইয়াসমিন খাতুনরা জানায়, পড়াশোনা ছাড়াও এই দুই শিক্ষক সকলের সব দিক খেয়াল রাখতেন। দু’-তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে বাড়িতে ছুটে চলে যেতেন ওঁরা। ছাত্রছাত্রীদের খোঁজ নিতেন। তাঁরা আর স্কুলে আসবেন না, বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের।
অভিভাবক তাজকিরা বিবি, জাহিরা বিবি, আলিমুদ্দিন শেখরা জানান, ওই দুই শিক্ষক প্রকৃত অর্থেই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন। তাই তাঁরাও নিশ্চিন্ত ছিলেন। এবার তাঁদের অভাব অনুভব করবেন।
সামাউল ও কৌশিকের কথায়, এ আমাদের পরম পাওনা। সরকারি নিয়ম মেনে চলে যেতে হচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি ছাত্রছাত্রীদের সুখস্মৃতি যা চিরকাল ধরা থাকবে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরাও ওই দুই সহকর্মীর অভাব বোধ করব।” জেলা প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক বলেন, “এই ঘটনাই প্রমাণ করে ওই দুই শিক্ষক ছাত্রছাত্রী তথা এলাকাবাসীর প্রিয়জন হয়ে উঠেছিলেন। এতেই বৃদ্ধি পায় শিক্ষার উৎকর্ষতা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy