Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

শৌচাগারে সাপ, অগত্যা গাছতলায়

কয়েক দিন আগে প্রশাসনের ‘গ্রামে চলো’ কর্মসূচিতে আড়শা এসেছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও। আচমকাই জেলাশাসক ঢুকে পড়েন আড়শা হাইস্কুলে।

 উঁকি: পরিদর্শনে প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: সুজিত মাহাতো

উঁকি: পরিদর্শনে প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

শৌচালয়ে যাওয়ার দরকার পড়লে কোথায় যাও? জেলাশাসকের প্রশ্নে মাথা নিচু করে স্কুলছাত্রীর জবাব, ‘‘স্যর, গাছতলায়।’’ অবাক জেলাশাসকের পরের প্রশ্ন, ‘‘শৌচালয়ে যাও না কেন?’’ ‘কন্যাশ্রী বড়দি’ ওই ছাত্রী আশালতা মাঝির সহজ সরল উত্তর, ‘‘বাথরুমে পোকামাকড় রয়েছে। সাপও বেরোয়।’’ পড়ুয়ার মুখে স্কুলের শৌচালয়ের হাল জেনে প্রধান শিক্ষককে জেলাশাসক প্রশ্ন করেন, ‘‘মাস্টারমশাই এটা শুনতে কি খুব ভাল লাগছে?’’ দৃশ্যত বিড়ম্বনায় পড়া প্রধান শিক্ষকের উত্তর, ‘স্যর, বাথরুমটা এখনও ঠিক মতো করে উঠতে পারিনি।’’ জেলাশাসক-প্রধান শিক্ষক-স্কুল পড়ুয়ার এই কথোপকথনের সাক্ষী আড়শা হাইস্কুল।

কয়েক দিন আগে প্রশাসনের ‘গ্রামে চলো’ কর্মসূচিতে আড়শা এসেছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও। আচমকাই জেলাশাসক ঢুকে পড়েন আড়শা হাইস্কুলে। উদ্দেশ্য, স্কুলের শৌচালয় সরেজমিনে পরিদর্শন। জেলাশাসককে আপ্যায়ন করে তাঁর ঘরে নিয়ে যান প্রধান শিক্ষক অমরনাথ বিশ্বাস। জেলাশাসক তাঁকে জানান, তিনি স্কুলের শৌচালয় পরিদর্শন করতে চান। এর পরে তাঁর নজরে পড়ে স্কুল চত্বরের এক কোণে একটি ঘরের সামনে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো রয়েছে। বুঝতে পারেন সেটি-ই শৌচালয়। জেলাশাসকের কাছে ছাত্রীদের অভিযোগ, শৌচালয়ে জলও থাকে না। শৌচালয়ের এমন হাল শুনে দৃশ্যত বিরক্ত জেলাশাসক প্রধান শিক্ষককে বলেই ফেলেন, ‘‘ছাত্রীরা বাথরুম ব্যবহার করতে পারছে না। স্কুলের বাথরুমের যদি এ রকম অবস্থা হয়, আপনি কি আপনার মেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন।’’ স্কুল ছাড়ার আগে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে জেলাশাসকের নির্দেশ ছিল, সোমবারের মধ্যে শৌচালয়টি ব্যবহারের যোগ্য করে তুলতে হবে। তার পরে পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের ছবি তাঁকে পাঠাতে হবে। যদিও সেই কাজ শেষ হয়নি এ দিন।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘রবিবার প্রায় সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন কিছুটা কাজ হয়েছে। বাকিটাও দ্রুত হয়ে যাবে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘স্কুল পরিদর্শনে এসে জেলাশাসক জলের ব্যবস্থা করা-সহ যে সমস্ত কাজ করতে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন, সেই কাজগুলি শুরু করেছি।’’

গত ১৪ অগস্ট ‘কন্যাশ্রী দিবসে’ বিভিন্ন স্কুলের ‘কন্যাশ্রী বড়দি’দের থেকে স্কুলের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব চেয়েছিল জেলা প্রশাসন। একাধিক স্কুলের ‘কন্যাশ্রী বড়দি’ তাদের স্কুলের শৌচাগারের হাল তুলে ধরে প্রশাসনের কাছে। তাদের কেউ জানায়, শৌচাগার তালাবন্ধ থাকে। কেউ জানায়, শৌচাগারে জল থাকে না। শৌচালয়ের নোংরা পরিবেশের কথাও উঠে আসে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার থেকে প্রত্যেক মাসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির শৌচালয় কী অবস্থায় রয়েছে, তার ছবি জেলা শিক্ষা দফতরে পাঠানোর নির্দেশিকা জারি করেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রতি মাসে স্কুলগুলি শিক্ষা দফতরে ‘বিল’ সংক্রান্ত নথি পাঠায়। তার সঙ্গে শৌচাগারের ছবিটাও দিতে হবে। স্কুলে এসে এক জন ছাত্রী শৌচালয় ব্যবহার করতে পারবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সামন্ত বলেন, ‘‘আপাতত জেলার ৩৫০টি স্কুল সামনের মাস থেকে শৌচালয়ের ছবি জমা দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arsha High School Student Toilet Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy