চিকিৎসকদের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র
‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি থেকে গোলমালে পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙার ছাত্র সৌমেন বাউরির পেট গুলি ফুঁড়ে দিয়েছিল। অন্য দুই গুলিবিদ্ধ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও প্রাণ সংশয় হয়েছিল সৌমেনের। অবশেষে বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকদের দেড় মাস ধরে নিরলস চেষ্টায় কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্র অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন সে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।
গত ২২শে জুন পাত্রসায়রে তৃণমূলের একটি কর্মসূচি ছিল। কাঁকরডাঙা মোড়েও বিজেপি কর্মীরা জমায়েত করেছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, কাঁকরডাঙা মোড়ে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর গাড়ি পৌঁছলে বিজেপির ভিড় থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলা হয়। যদিও শুভেন্দুবাবু তাঁর সামনে এমন কিছু হয়েছে বলে মানতে চাননি। তা নিয়ে গোলমাল বাড়ে। পুলিশ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। অভিযোগ সেই সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন হাটকৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সৌমেন, তার এক জেঠতুতো দাদা ও এক পড়শি। ওই দু’জন নিজেদের বিজেপি কর্মী বলে জানান।
শনিবার শল্য বিভাগের ওয়ার্ডে বেডে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল সৌমেন। সে বলেন, ‘‘সে দিন টিউশন নিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম। হঠাৎই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে পড়ে যাই। বাড়ি ফিরব বলে তাড়াতাড়ি ভিড় ঠেলে হাঁটছিলাম। হঠাৎ গুলি লাগল। তারপর কী হয়েছিল, মনে নেই।’’ তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বাঁকুড়া মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসক অর্ণব মণ্ডল, শিবাজী বসুদের দেখে হাসি ফোটে সৌমেনের মুখে। ডাক্তারবাবুদের কাছে মনসা পুজোর আগে বাড়ি ফেরার আর্জি জানায় সে। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দেন, “নিশ্চয় তোমাকে মনসা পুজোর আগে ছুটি দিয়ে দেব। তুমি এখন পুরো সুস্থ।”
চিকিৎসকেরা জানান, বুলেট সৌমেনের পেটের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। বুলেটের আঘাতে পেটের প্রায় এক সেন্টিমিটার ও পিঠের দিকে প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার ফুসফুস, বাঁ দিকের কিডনি, প্লীহা, অগ্নাশয়, বৃহদন্ত্র, পাকস্থলী-সহ পেটের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বার দুই অস্ত্রোপচার করে সৌমেনের ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি ও প্লীহা বাদ দিতে হয়। বৃহদন্ত্রের একাংশ এখনও শরীরের বাইরে রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে অস্ত্রোপচার করে তা শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বাঁকুড়া মেডিক্যালের শল্যবিভাগের প্রধান উৎপল দে বলেন, “কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ওকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেব।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “সৌমেনকে সিসিইউ ইউনিটে রেখে তার জন্য আমরা বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড গড়েছিলাম। চিকিৎসকদের তৎপরতায় সৌমেন এখন সুস্থ।”
সৌমেনের মা মঞ্জুদেবী, বাবা কিষ্ট বাউরি গত দেড় মাস ধরে হাসপাতালেই রয়েছেন। মঞ্জুদেবী বলেন, “গোড়ার দিকে ছেলের অবস্থা দেখে আমরা প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ডাক্তারবাবুদের চেষ্টাতেই সে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব ভেবে কত যে স্বস্তি পাচ্ছি বলে বোঝাতে পারব না।” কিষ্টবাবুর আক্ষেপ, “ছেলে ঠিক হলেও ওর একটি কিডনি বাদ যাওয়ায় ভবিষ্যতে ভারী কাজ করতে পারবে না বলেই ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছেন। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। বিনা দোষে আমার ছেলেটার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘সে দিন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শূন্যে গুলি ছুড়েছিল। সেই গুলিতে ওই ছাত্র জখম হয়নি।’’ তাহলে কার ছোড়া গুলিতে ওই ছাত্র জখম হয়েছিল? পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy