স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে। নিজস্ব চিত্র
বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে বাবার। আহত হয়েছেন নিজে। পিতৃবিয়োগের শোক ও নিজের আঘাত নিয়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ‘রাইটার’ নিয়ে শনিবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন বাঁকুড়ার সিমলাপাল জামিরডিহা গ্রামের সন্ধ্যামণি মান্ডি। তবে এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পাত্রসায়র ব্লকের দুই ছাত্রী শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাই দিতে পারলেন না।
বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই বাড়িতে বজ্রাঘাতে আহত হন সন্ধ্যামণি। মারা যান তাঁরা বাবা মনোরঞ্জন মান্ডি। মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী শনিবার প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে জন্য তৎপর হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ব্লক প্রশাসনও আশ্বাস দিয়েছিল। তবু এলাকার অনেকে আশঙ্কায় ছিলেন, শোক ও আঘাত সামলে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারবেন তো সন্ধ্যামণি?
এ দিন সে স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্রী বিদিশা সরকারকে অনুলেখক হিসেবে নিয়ে সিমলাপাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সভাঘরে বসে পরীক্ষা দিলেন। তার মনোবল বাড়াতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নেন বিডিও (সিমলাপাল) রথীন্দ্রনাথ অধিকারী ও সিমলাপাল থানার আইসি সুদীপ দাশগুপ্ত। বিডিও বলেন, ‘‘দু’দিন আগে সন্ধ্যামণির বাবা মারা গিয়েছেন। নিজে গুরুতরও জখম। এই অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়া সহজ নয়। ওঁকে উৎসাহ দিতেই গিয়েছিলাম।’’
সিমলাপাল মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষিকা শিলা পাত্র বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। তবুও ও পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজের লেখার ক্ষমতা ছিল না। তাই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অনুমোদন নিয়ে অনুলেখকের ব্যবস্থা করে ওর পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’’ তিনি জানান, সন্ধ্যামণির উপরে তাঁরা নজর রাখছেন। পরবর্তী পরীক্ষার দিনগুলিতে তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে, খেয়াল রাখা হচ্ছে সে দিকেও।
ওই ছাত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছেন পাড়াতুতো বউদি অঞ্জলি মুর্মু। তিনি বলেন, ‘‘আধশোয়া হয়ে পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটা। খুবই কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনের জোর আমাদের অবাক করেছে।’’ সন্ধ্যামণি বলেন, ‘‘বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছিলাম না। ডান হাতে একেবারেই জোর নেই। রাইটার পেয়েছি বলেই পরীক্ষা দিয়েছি।’’
এ দিকে পাত্রসায়রের বামিরা জি ডি ইনস্টিটিউশনে পরীক্ষা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন কুশদ্বীপ মাখনলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এক ছাত্রী। তাঁর বাড়ি কাঁকড়াশোলে। পরীক্ষাকেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে, সওয়া এক ঘণ্টা পরীক্ষা দেওয়ার পরেই তাঁর খিঁচুনি শুরু হয়। নিয়ে যাওয়া হয় পাত্রসায়র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করছিল উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি কমিটি। ওই কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, ছাত্রীটিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার পরে সেখান থেকেই তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তিনি আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। ওই কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়েছিলেন ওই মেয়েটিরই সহপাঠী আর এক ছাত্রী। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পরে, সে দিন সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু শনিবার ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর আগে ফের অসুস্থ বোধ করেন তিনি। কাউন্সিলের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রান্তিক মণ্ডল জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরীক্ষা দেওয়ার পরে, অসুস্থতার কারণে আর পরীক্ষা দিতে চাননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy