অর্ধগ্রাম বুথের কাছে সকাল থেকে এমনই জটলা দেখে প্রশাসনের কাছে নালিশ করে সিপিএম। ক্যুইক রেসপন্স টিম আসতেই মুর্হূতে পাতলা হয়ে যায় ভিড়। ছবি: জিত মাহাতো
মেজিয়ার শ্যামাপুরে পার্টি অফিসে তক্তপোশে বসে সিপিএম প্রার্থী ষষ্ঠীচরণ বাউরি। কানে মোবাইল, মুখে উদ্বেগ। ফোনে বলে চলেছেন— ‘‘না না, শেষ অবধি পড়ে থাকতে হবে। ওরা রাস্তায় ওই ভাবে জটলা করে ভয় দেখালে আরও-কে (রিটার্নিং অফিসার) বলতে হবে। কিন্তু ছাড়া যাবে না। দরকারে বার বার ফোন করে যেতে হবে।’’ ফোন ছাড়তে না ছাড়তেই স্ক্রিনে জমে যাচ্ছে মিসড্ কল। আবার কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন।
ফোন রেখে ষষ্ঠীচরণ বললেন, ‘‘বুথের ভিতরে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী চোখে পড়ছে না। সমস্যা এখানেই।’’ কীসের সমস্যা? তিনি জানান, খানিক আগেই তিনি অর্ধগ্রাম, ভুলুই, কালিকাপুর এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অর্ধগ্রাম প্রাইমারি স্কুলের বুথ থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার উপরে বেশ কয়েকটা জায়গায় তৃণমূলের ছেলেরা জটলা করে রয়েছে। ভোট দিতে যাওয়া লোকজনের উপরে তাঁরা নজর রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দলের অনেকেই ওই বুথে যেতে অস্বস্তিবোধ করছেন। কিন্তু প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকের কাছে বারবার ফোন করার পরেও ওখানে আধাসেনা পাঠানো হচ্ছে না। এটাই কি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন?’’ এমন অবস্থা না কি শালতোড়া বিধানসভার অনেক এলাকাতেই চলছে বলে সিপিএম প্রার্থীর অভিযোগ।
পরিস্থিতি দেখতে গাড়ি ছুটল অর্ধগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের দিকে। খাঁ খাঁ রাস্তায় গাছের ডালে, টালির চালায়, ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা তৃণমূলের পতাকা। কাছেই সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিস। কিন্তু সিপিএমের কোনও দেওয়াল লেখা, হোর্ডিং, ব্যানার, পতাকা চোখে পড়ল না।
অর্ধগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের বুথে কাছেই কয়েকটা জটলা। তাঁদের হাতে অবশ্য কোনও দলের পতাকা নেই। অচেনা মুখ দেখে পরিচয় জেনে একজন বললেন— ‘‘লিখে নিন, এখানে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে।’’ স্কুলের দরজার সামনে থাকা পুলিশ কর্মীও ঘাড় নেড়ে জটলার কথায় সায় দিলেন। বুথ চত্বরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা অবশ্য রয়েছেন। তাহলে বুথের কাছে জটলা থাকে কী করে?
জটলার কাছে গিয়ে তৃণমূলের কাউকে পাওয়া যাবে কি না জানতে চাওয়ায় এক যুবকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেন বলুন তো? ভোট তো ঠিকঠাক চলছে। সবাই তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছে। পঞ্চায়েত তৃণমূলের। লোকে উন্নয়ন দেখেছে।’’ কথার মাঝেই একটি নীল গাড়ি এসে ব্রেক কষল। জটলা থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘‘ওই তো, দাদা এসে গিয়েছেন। যা জানতে চান, ওঁকেই বলুন।’’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি থেকে ততক্ষণে সানগ্লাসে চোখঢাকা যুবকটি নেমে এসেছেন। পরিচয় জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ভোট ঠিকঠাক চলছে। দেখছেন তো।’’
তাঁকে দেখে আশপাশ থেকে আরও লোকজন এগিয়ে এসে জটলাকে আরও বড় করল। কর্মীদের ডেকে ডেকে কিছুটা ফিসফিসিয়ে, কিছুটা ইশারায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ভিড়ের কাছেই ব্রেক কষে দাঁড়াল ক্যুইক রেসপন্স টিম। গাড়ি থেকে নেমে রাজ্য পুলিশের এক কর্মী ও জনাকয়েক আধা সেনা তেড়ে গেলেন ভিড়ের দিকে। ভিড় পাতলা হয়ে গেল মুর্হূতে। সামনে জটলার সেই ‘দাদা’কে দেখে পুলিশ কর্মীটি বললেন, ‘‘দাদা এখান থেকে সরে যেতে হবে।’’ যুবকের জবাব, ‘‘আমরা তো কিছুই করছি না! রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ মাথা নেড়ে পুলিশ কর্মীটি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘‘বুঝতে পারছেন না, আমাদের উপরে চাপ আসছে। বার বার এই বুথ নিয়ে অভিযোগ যাচ্ছে উপরে।’’ পুলিশ কর্মীর সঙ্গে দাদার সখ্যতা দেখে ভিড়টা ফিরছিল।
সেখান থেকেই উড়ে এল— ‘‘কে অভিযোগ করেছে, বলুন না কে করেছে?’’ সঙ্গে সঙ্গে মুখে কাঠিন্য ভাব এনে পুলিশ কর্মীটি বলেন, ‘‘অত কথা কেন, এখান থেকে সরে যান না।’’ বলেই বুথের সামনের ফাঁকা অবস্থার ছবি মোবাইলে তুলে নিজেদের গাড়িতে চড়ে বসলেন তিনি।
এগিয়ে গেল ক্যুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি। ফের জমতে শুরু করল জটলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy