Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Recruitment scam

কোর্টের রায়ে অবসাদ, দাবি মৃতের স্ত্রীর

সিমলাপালের ভূতশহর উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথের অপমৃত্যুর পিছনে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্টের রায়ে ২০১৬-র প্যানেল বাতিল হওয়ার যোগ রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিমলাপালের মৃত শিক্ষক (ইন সেটে) । শোকে কাতর মা শেফালি সরেন।

সিমলাপালের মৃত শিক্ষক (ইন সেটে) । শোকে কাতর মা শেফালি সরেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিমলাপাল শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৭
Share: Save:

গ্রামের তরতাজা যুবকের হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া অনেকেরই নজরে এসেছিল। কিন্তু সেই যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে, ভাবতে পারেননি কেউ। সোমবার সিমলাপাল থানার উপরশোল গ্রামে বাড়ির পাশে গাছ থেকে স্কুল শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ সরেনের (৩৭) দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাই অনেকেই চমকে উঠেছেন। এই মৃত্যুর পিছনে কী কারণ, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সবার মনে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে। তবে দেহের ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট ভাবে জানা যাবে। তাই দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করছে পুলিশ।

সিমলাপালের ভূতশহর উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথের অপমৃত্যুর পিছনে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্টের রায়ে ২০১৬-র প্যানেল বাতিল হওয়ার যোগ রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মৃতের স্ত্রী মানকু হাঁসদা সরেন বলেন, “হাই কোর্টের রায়ে শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হওয়ার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন স্বামী। তবে আত্মহত্যা কেন করলেন বুঝতে পারছি না।” যদিও মৃতের ভাই জীতেন্দ্রনাথ সরেন এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ার মর্গের সামনে বলেন, “দাদা মাস দুয়েক ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। আমরা কারণ জানতে চাইলেও কিছু বলেনি”।

বীরেন্দ্রনাথ অবশ্য আগেই চাকরি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পীযূষকান্তি বেরা। তিনি বলেন, “ওই শিক্ষক আরও আগে চাকরি পেয়েছিলেন। ২০১৬-র প্যানেলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।”

বীরেন্দ্রনাথের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস ষন্নিগ্রহী বলেন, “২০১৪-’১৫ সালের কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষার প্যানেলে বীরেন্দ্রনাথের চাকরি হয়। ২০১৯ সালে তিনি বনগাঁর গাইঘাটার একটি স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে বদলি হয়ে এখানে আসেন।’’

মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, বছর দশেক আগে ওন্দার রতনপুরের যুবতী মানকুর সঙ্গে বীরেন্দ্রনাথের বিয়ে হয়। তাঁদের একটি ন’বছরের ছেলে ও দেড় বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, বিধবা মা শেফালি ও ভাই জীতেন্দ্রনাথকে নিয়ে থাকতেন বীরেন্দ্রনাথ। ২০২১ সালে বীরেন্দ্রনাথের বাবা শুকদেব সরেনের মৃত্যু হয়। জীতেন্দ্রনাথ বাড়ির চাষাবাদের কাজ দেখাশোনা করেন।

এ দিন জীতেন্দ্রনাথ জানান, দু’মাস আগে বীরেন্দ্রনাথের স্ত্রী মানকুর অস্ত্রোপচার হয়। তখন থেকেই অবসাদগ্রস্ত হন বীরেন্দ্রনাথ। প্রায়ই চুপচাপ হয়ে বাড়িতে বসে থাকতেন। তাঁর কী সমস্যা, বাড়ির লোক বারবার জানতে চাইলেও জবাব দেননি।

জীতেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘একবার ডাক্তার দেখানোর কথাও বলেছিলাম, কিন্তু দাদা রাজি হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পরে দাদাই আমাদের পরিবারের অভিভাবক ছিল। আমরা অসহায় হয়ে গেলাম।’’

গরমের জন্য রবিবার রাতে সবাই উঠোনে খাট পেতে শুয়েছিলেন। মৃতের স্ত্রী মানকু বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ সন্তানদের নিয়ে স্বামী ও আমি ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ি। রাতে কোনও কথা হয়নি। কখন বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যায়, বুঝতে পারিনি।’’

বীরেন্দ্রনাথের পড়শি সুভাশিস সরেন বলেন, “বহুদিন ধরেই বীরেন্দ্রনাথ চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। ওর হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মানসিক কোনও সমস্যায় ভুগছে।”

এই মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। ‘এবিটিএ’-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্ত বলেন, “ওই শিক্ষক কেন আত্মঘাতী হয়েছেন জানি না, তবে তৃণমূল আমলে যাঁরাই চাকরি পেয়েছেন সকলেই মানসিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।”

‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গোরাচাঁদ কান্ত বলেন, “শিক্ষকের মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া প্যানেলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ পাওয়া যায়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Simlapal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE