Advertisement
E-Paper

প্রত্যাশার জয়েও ব্যবধান কম

নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েত ও মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি পঞ্চায়েত-সহ নলহাটি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে নলহাটি বিধানসভা।

নলহাটিতে আনা বাবার মাজার।

নলহাটিতে আনা বাবার মাজার।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়  , তন্ময় দত্ত 

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৪ ০৯:৪১
Share
Save

প্রত্যাশা মতোই জয়ের ধারা বজায় রইল। তবে রইল চিন্তাও। কারণ এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ব্যবধান কমল নলহাটি বিধানসভায়।

তৃণমূল সূত্রে দাবি, এ জন্য বাম-কংগ্রেসের ভোট বৃদ্ধিকেই ‘দায়ী’ করছেন শাসক দলের নেতারা। অর্থাৎ হাঁসন বিধানসভার মতোই নলহাটি বিধানসভাতেও বাম-কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দলের অন্য নেতা মন্ত্রীরা একাধিকবার সংখ্যালঘু ভোট ভাগ না হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও কেন জোটের ভোট বৃদ্ধি হল আর কেনই বা নিজেদের দখলে থাকা ৫টি পঞ্চায়েতে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকতে হল এটাই এখন নলহাটি বিধানসভার তৃণমূলের অন্দরে আলোচনার বিষয়।

নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েত ও মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি পঞ্চায়েত-সহ নলহাটি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে নলহাটি বিধানসভা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে নলহাটি বিধানসভা এলাকায় চোখে পড়ছে বাম-কংগ্রেসের ভোট বৃদ্ধি। ২০১৯ সালের ভোটে বাম-কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৯ হাজার ৬৭২ ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দু’দলের ভোট কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৩২৮। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫২ হাজার ২৭৬।

তৃণমূলের অন্দরে চর্চা হচ্ছে নলহাটি পুরসভা নিয়ে। তার কারণও রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলার ৬টি পুরসভার মধ্যে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ যে শহরের বাসিন্দা সেই বোলপুর পুরসভা-সহ দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা রামপুরহাট-সহ সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া এই ৫টি পুরসভা এলাকায় তৃণমূল বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল। একমাত্র নলহাটি পুরসভা থেকে তৃণমূল বিজেপির থেকে এগিয়ে ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার অন্য পুরসভাগুলিতে তৃণমূলের ফল খারাপ হলেও নলহাটি পুরসভাতে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও নলহাটি পুরসভা এলাকায় তৃণমূল এগিয়ে থাকার ধারা বজায় রেখেছে। আগের থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে ৩ হাজার ৬৪১ ভোটে এগিয়ে আছে তৃণমূল।

তবে দীর্ঘদিন পুরসভার নির্বাচন না হওয়া, পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে পুরসভা পরিচালিত হওয়ার পুরসভার পরিষেবা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের আঁচও লোকসভা ভোটে পড়েছে। যার ফলে বেশ ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে তৃণমূল বিরোধীদের থেকে পিছিয়ে আছে। তার মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডে বিজেপি এবং ১টি ওয়ার্ডে বাম-কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে আছে তৃণমূল। বেশ কিছু ওয়ার্ডে দেখা গিয়েছে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর চলেছে তৃণমূলের। বাম-কংগ্রেসের এই ভোট বৃদ্ধিতে আগামী দিনে পুরসভা নির্বাচনে গড় রক্ষা করতে তৃণমূলকে যথেষ্ট খাটতে হবে বলে এলাকার অনেক তৃণমূল কর্মীও মনে করছেন।

অন্য দিকে, তেমন প্রচার না চালিয়ে, প্রার্থী নিয়ে টানাপড়েন থাকা সত্বেও বিজেপি পুর এলাকায় ভাল ফল করেছে। আবার গ্রামাঞ্চলেও বিজেপি ভাল ফল করেছে। নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েতের সব কটি তৃণমূলের দখলে। সেই ৯টির মধ্যে কুরুমগ্রাম, বড়লা, হরিদাসপুর, বাণিওড়, বাউটিয়া— এই ৫টি পঞ্চায়েতে বিজেপি তৃণমূলের থেকে এগিয়ে আছে। আবার মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির রুদ্রনগর, কুশমোড় ১ ও কুশমোড় ২ এই তিনটি পঞ্চায়েতে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বাম-কংগ্রেস ভাল ভোট পেয়েছে।

তৃণমূল কর্মীরা অনেকে মনে করছেন, রুদ্রনগর, কুশমোড় ১ ও কুশমোড় ২ এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় বাম-কংগ্রেসের ভাল ভোট প্রাপ্তি নলহাটি বিধানসভা এলাকায় এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যবধান কমে যাওয়ার মূল কারণ। অন্যদিকে নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৫টি পঞ্চায়েতে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকাটাও জয়ের ব্যবধান কমে যাওয়ার কারণ বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করছেন।

বিরোধীদের অনেকে দাবি করছেন, দল ভাঙিয়ে, বিরোধীদের টেনে বেশির ভাগ পঞ্চায়েত দখলে রয়েছে তৃণমূলের। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতে দখলদারি পেলেও ভোট বাক্সে সেই মতো ভোট পায়নি তৃণমূল। তৃণমূল কর্মীদের অনেকের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চায়েত স্তরে প্রচার, হোর্ডিং, ব্যানার দেওয়া, সভা অনেক কম হয়েছে। একমাত্র বুথ স্তরের কর্মীদের সক্রিয়তায় দল জয়ী হয়েছে বলে তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন।

নলহাটি বিধানসভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত, তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন দলের ফল ভাল হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে যেখানে আমাদের ভোট কম হয়েছে আগামী দিনে তা ঠিক করে নেব।’’ বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘মানুষ যে ভালবাসা নিয়ে আমাদের ভোট দিয়েছেন সেটা আমাদের আগামী দিনে লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছে।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের কর্মীদের মধ্যে সক্রিয় মনোভাব কম ছিল। বুথ স্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতাও হারের কারণ। পাশাপাশি তৃণমূল বিরোধী ভোট এ বার জোট প্রার্থীও পেয়েছেন। ফলে আমাদের ভোট কমেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 nalhati TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}