তৃণমূলের অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র।
কেউ মনে করছেন, দলে এখন দু’টি ভাগ— এক পক্ষ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে, আর এক পক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে। আবার কেউ মনে করছেন, ক্ষমতায় থেকে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের ‘চালচলন পাল্টে গিয়েছে’। এ সবের কারণেই গত পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়া জেলায় দলের ফল খারাপ হয়েছে, তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনের মঞ্চে নেতাদের মুখে শোনা গেল, এমনই আত্মসমালোচনার সুর।
পুরুলিয়া শহরের রবীন্দ্রভবনে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের এই অনুষ্ঠানে দলের সব অঞ্চল, ব্লক ও জেলা নেতৃত্ব, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক, তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘যিনি যেখানে দায়িত্বে রয়েছেন, মনে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের ভাবমূর্তি নির্ভর করে তাঁর উপরে। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের কল্যাণে যে প্রকল্পগুলি নিয়েছেন, তা কি আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারছি?’’
জেলা পরিষদ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, দলে এখন দু’টি ভাগ— যাঁরা প্রশাসনিক ক্ষমতায় রয়েছেন, আর যাঁরা সাংগঠনিক ক্ষমতায় রয়েছেন। সাধারণ কর্মীরা কোন দিকে যাবেন, সে প্রশ্ন তুলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা প্রশাসনিক ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁদের দলের কথা শুনে চলতে হবে। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, জেলা সভাপতিকে সরাসরি চিঠি লিখুন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘২০১৬ বিধানসভা ভোটে সাত আসনে জেতার পরে, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে ফল ভাল হয়নি। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। পুরভোটে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামুন।’’
সমালোচনায় সরব হন বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতোও। তিনি দাবি করেন, ‘‘অনেক জায়গায় ঠিকাদারেরা ঠিক করছেন, কে দলের অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি হবেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের একাংশের অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়ে না। তাঁদের চালচলন, পোশাক বদলে গিয়েছে। মানুষ তা মানতে পারেননি বলেই ভোটে শিক্ষা দিয়েছেন। সে বার্তা গ্রহণ করতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্যে অনুষ্ঠানে রীতিমতো হাততালি পড়ে। বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দু’শোর বেশি আসন নিয়ে রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসছেন, তখন জেলায় আমরা ন’টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি জিতেছি, এটা লজ্জার। যে ভুলের জন্য আমরা আসনগুলি হারালাম, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।’’
মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘জেলায় তিনটি আসনে জিতেছি, কাজ করতে পারলে আরও জিততাম। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পগুলি আমরা মানুষকে বোঝাতে পারছি না। বিজেপি দেশের কতটা সর্বনাশ করছে, সেটাও বোঝাতে পারছি না।’’ জেলা সভাপতি সৌমেন যে জনসংযোগ অভিযান শুরু করেছেন, তাকে সাধুবাদ জানান তিনি। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘পুরভোটে ঠিক করে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’’ ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে নামার ডাক দেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতোও। দলের মধ্যে কোথাও সমন্বয়ের অভাব ঘটছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে সায়ন্তিকার পরামর্শ, পুরনো কর্মীদের সম্মান করতে হবে। সে সঙ্গে, দলের মধ্যে থেকে যাঁরা দলের ক্ষতি করছেন, তাঁদের ছেঁটে ফেলতে হবে।
দলের প্রতিষ্ঠালগ্নের যে সব ব্লক সভাপতি এখনও রয়েছেন, তাঁদের সম্মানিত করা হয় এ দিন। ছিলেন রাজ্য সম্পাদক স্বপন বেলথরিয়া, বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন, জেলা পরিষদের মেন্টর অঘোর হেমব্রমেরা। সে সময়ে দলের আহ্বায়ক তথা বর্তমানে জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে থাকলেও, তাঁকে সম্মানিত না করা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অবশ্য বলেন, ‘‘উনি আমাদের সম্মানীয় নেতা। এ দিন সে সময়ের ব্লক সভাপতিদের সম্মান জানানো হয়েছে। ওঁকে অসম্মান করা হয়নি।’’ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি প্রাক্তন জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুকে।
পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, ‘‘আমরা তৃণমূল সম্পর্কে যে অভিযোগ তুলে আসছি, তা এখন তাঁদের নেতারাই উপলব্ধি করছেন।’’ মলয় ঘটকের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ মানুষ ভালই বোঝেন, দেশের সর্বনাশ কারা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy