আবেদন: ডিজিটাল রেশন কার্ড নিতে লাইন। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র
যোগ্য হলেও যাঁরা এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি, তাঁদের জন্য বিশেষ শিবির করে আবেদনপত্র নিতে শুরু করেছে রাজ্যের খাদ্য দফতর। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গ্রামীণ এলাকায় ব্লক অফিস ও শহরে পুরসভাগুলিতে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিবির চলবে চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আবেদন জমা দিতে লম্বা লাইন পড়ছে জেলায়।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি। যোগ্য হওয়া সত্বেও যাঁরা এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি তাঁরা তো বটেই, নতুন কার্ড বা ভুল সংশোধনের জন্যও অনেকে শিবিরে আসছেন।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের হাতে ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। কিন্তু এখনও বেশ কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা যোগ্য হওয়া সত্বেও প্রকল্পের সুবিধা পাননি। তাঁদের কথা ভেবেই শিবির। তবে নতুন রেশন কার্ড করতে বা সংশোধনের জন্য নয়, আবেদনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে মূলত অন্য দু’টি কারণে। এক, রাজ্যে এনআরসি হতে পারে সেই আশঙ্কায় অনেকেই পরিচয়পত্র হিসেবে রেশন কার্ড পেতে চাইছেন। দুই, ডিজিটাল কার্ডের আকার নিয়ে বিভ্রান্তি। বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সমস্যাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বা খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় পাওয়া ডিজিটাল কার্ডের তুলনায় রাজ্য সরকারের ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের কার্ডগুলি আকারে বড় হওয়ায় কোথাও কোথাও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বড়গুলি নয়, ছোটই আসল ডিজিটাল রেশন কার্ড। খাদ্য দফতরের কর্তারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের কার্ডগুলিও ডিজিটাল। কিন্তু সবাই ‘ছোট কার্ড’ পেতে চাইছেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনা (এনএফএসএম) চালুর আগে রেশনে তিন ধরনের কার্ড ছিল। এপিএল, বিপিএল এবং অন্নপূর্ণা অন্ত্যোদয় যোজনা। নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে এখন পাঁচ ধরনের কার্ড।
২০১১ সালে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এবং পুরসভাগুলি থেকে আর্থ-সামাজিক ও বর্ণ সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে খাদ্য দফতর। সেখানে যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। আর্থিক অবস্থা অনুসারে এনএফএসএমের আওতায় থাকা জেলার মানুষকে তিন ধরনের কার্ড দেওয়া হয়েছে— প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (পিএইচএইচ), সুগার প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (এসপিএইচএইচ) এবং অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (এএওয়াই)। ওই কার্ডগুলি এটিএম কার্ডের মতো। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জেলার এমন কার্ড প্রাপকের সংখ্যা ২৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭১৭ জন।
কিন্তু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছিল, সেই তালিকায় এমন কিছু মানুষ ছিলেন যাঁরা সত্যিই খাদ্য সুরক্ষার সুযোগ পেতে পারতেন। তাঁদের প্রকল্পের সুবিধা দিতে রাজ্য সরকার ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্প নিয়ে আসে। রাজ্যের সেই যোজনায় কার্ড দু’ধরনের— রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১ এবং আরকেএসওয়াই ২। খাদ্যসাথী প্রকল্পে ডিজিটাল রেশন কার্ড পেয়েছেন ১২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৮৩ জন। সেগুলি আকারে বড়, সবুজ ও সাদা রঙের।
খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, সবুজ ও সাদা কার্ডগুলিও যে ডিজিটাল রেশন কার্ড সেটা অনেকে বুঝতে চাইছেন না। নতুন কার্ড তৈরি, পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি, সংশোধনের আবেদন তো আছেই, ছোট ডি়জিটাল কার্ড পেতে নতুন করে আবেদন করে বসছেন অনেকেই। তবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা কোনও পরিবার যদি আরকেএসওয়াই ২ থেকে আরকেএসওয়াই ১ নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে চান, সে ক্ষেত্রে তিনি তা করতে পারেন। তদন্ত করে সেই পরিবারকে কার্ড দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অফ সেলের’ জন্য আগামী দিনে যে রেশন কার্ডগুলি তৈরি হবে সেগুলিতে আধার কার্ডের ‘লিঙ্ক’ করাতে হচ্ছে। তাই প্রত্যেক আবেদনকারীকে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড নিয়ে আসতে হচ্ছে। আবেদনপত্রেও দু’টি কার্ডের নম্বরের উল্লেখ থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy