সোমবার সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবনের সভাঘরে স্পেনীয় দম্পতির কোলে শিশু শরত। —ফাইল চিত্র।
সারু ব্রেয়ারলি বা শেরু মুনশি খান মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়ায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নিজের পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসন্তান অস্ট্রেলীয় দম্পতির দত্তক সন্তান হয়ে উঠেছিল। দেব পটেল অভিনীত বায়োপিক ‘লায়ন’ (২০১৬) সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল সেই অবিস্মরণীয় কাহিনি। শিউড়ির ছোট্ট শরৎও যেন সেই কাহিনির কথাই মনে করিয়ে দিল।
ভিন্ দেশি বাবা-মায়ের কোলে চেপে বীরভূম থেকে সূদুর স্পেনের মাদ্রিদ শহরে পাড়ি দেবে বছর দেড়েকের শরৎ। সোমবার যাবতীয় নিয়ম মেনে ‘স্পেশ্যাল চাইল্ড’ শরৎকে দত্তক নিলেন স্পেনের এক নিঃসন্তান দম্পতি। শিশুটি এবার অভিভাবকের ছত্রছায়া পাওয়ায় খুশি জেলা প্রশাসন ও হোম কর্তৃপক্ষ। সন্তান লাভে খুশি স্প্যানিশ দম্পতি ফ্রান্সিস্কো দে বোর্খা এর্নান্দেস ব্রেইখো ও মার্তা গালান এররান্স। তাদের কোলেই এ বার যেন স্পেনে অকাল ‘শরৎ-কাল’।
বীরভূম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্ম হয় শিশু শরতের। জন্মের পরেই তাকে হাসপাতালে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তার জন্মদাত্রী। জন্ম থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা অ্যাসফেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিল শিশুটি। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের পরিচর্যায় কিছুটা সুস্থ হয় সে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির নির্দেশে তার জায়গা হয় সিউড়ির স্পেশালাইজ়ড অ্যাডপশন এজেন্সি বা শা-তে। চিকিৎসকেদের কথায়, যে সব শিশু এই সমস্যা নিয়ে জন্মায় তাদের বুদ্ধির বিকাশ কিছুটা পিছিয়ে থাকে। তবে উন্নত চিকিৎসা ও যত্ন পেলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। শরতের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটবে বলে আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা।
স্পেশালাইজ়ড অ্যাডপশন এজেন্সি থেকে শিশু দত্তক দেওয়া হয়। নিঃসন্তান দম্পতি বা যাঁদের শিশু দত্তক নেওয়ার প্রয়োজন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের অধীনে থাকা সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথোরিটির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন জানান। স্পেশ্যাল চাইল্ড শরতকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে আবেদন করেন ফ্রান্সিস্কো ও মার্তা।
বছর দেড়েক আগেই স্পেনীয় দম্পতির আবেদনের ভিত্তিতে শুরু হয় দত্তক দেওয়ার প্রক্রিয়া। অবশেষে সোমবার সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সিউড়ি প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স হলে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে পাকাপাকি ওই দম্পতির হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়।
মাদ্রিদ শহরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের ফ্রান্সিস্কো ও বছর সাঁইত্রিশের মার্তা কেমিক্যাল সায়েন্সে পিএইচডি। পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টিটিভ ফ্রান্সিস্কো ও সরকারি স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষিকা মার্তা গত ছ’বছর ধরে শিশু দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সোমবার সেই বৃত্ত সম্পন্ন হল।
স্পেনীয় ওই দম্পতি জানান, শিশুটি তাঁদের কাছে আর্শীবাদস্বরূপ। ওকে দত্তক নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি বীরভূমের জেলা প্রশানকে। আদর ও যত্নে সন্তানকে বড় করে তুলবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জেলাশাসক বলেন, “২০২২ সালের দত্তক আইন অনুযায়ী গোটা প্রক্রিয়া এগিয়েছে। যাবতীয় পদ্ধতি মেনেই এই দত্তক সম্পন্ন হয়েছে। স্পেন থেকে ওই দম্পতি অনলাইনে কারা পোর্টালের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। দীর্ঘ এই প্রক্রিয়ায় আমরা ওঁদের পেশা, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান খতিয়ে দেখে ওঁদের হাতে শিশুটিকে তুলে দিলাম।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভাবে ভিন্ দেশি দম্পতিকে দত্তক দেওয়ার প্রক্রিয়া জেলায় এই প্রথম। শিশুটির পাসপোর্ট ও জন্মের শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই তিনজনের এই নতুন পরিবার উড়ে যাবেন স্পেনে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ বলেন, “যখন কেউ দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেন, তখন তাঁরা শিশুকন্যা, শিশুপুত্র নাকি স্পেশাল চাইল্ড বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে নেবেন সেটা জানাতে হয়। স্পেনের ওই দম্পতি স্পেশাল চাইল্ড চেয়েছিলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy