Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
adivasi

Simlapal: শিকলবাঁধা পাঁচ বছর, আদিবাসী যুবকের খবর ভাইরাল হতেই বন্দিদশা কাটাতে উদ্যোগী প্রশাসন

ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে বুঝতে পেরে পরিবারের শেষ সম্বল বন্ধক দিয়ে তাঁর চিকিৎসা শুরু করান মা। এক সময় বন্ধ করতে হয় সে চিকিৎসাও।

শিকলে বন্দি হয়েই পাঁচটি বছর কেটে গিয়েছে প্রশান্ত মান্ডির।

শিকলে বন্দি হয়েই পাঁচটি বছর কেটে গিয়েছে প্রশান্ত মান্ডির। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিমলাপাল শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ২১:২২
Share: Save:

দু’পায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো শিকল। ভারী তালায় আঁটা সে শিকলে বন্দি হয়েই কেটে গিয়েছে পাঁচটি বছর। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন আদিবাসী যুবক প্রশান্ত মান্ডির বন্দিদশা কাটার আশা দেখতে পাচ্ছে তাঁর পরিবার। সম্প্রতি শিকলবন্দি প্রশান্তর ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ভাইরাল হতেই তাঁর চিকিৎসা-সহ যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের শালবানি গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছরের প্রশান্তের পরিবারের সম্বল বলতে শুধু বিঘে দুই জমি। সে জমিতে চাষবাস করেও অভাব মিটত না। অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হত তাঁর বাবাকে। মাস ছয়েক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর ভারতী মান্ডিই দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ভারতী জানিয়েছেন, সংসারে অভাব সত্ত্বেও স্থানীয় পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু কলেজ থেকে স্নাতক হন মেধাবী প্রশান্ত। শুরু করেন চাকরির খোঁজও।

পরিবারের দাবি, ২০১৬ সালে একটি স্কুলে পার্শ্বশিক্ষক পদে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন প্রশান্ত। তবে বাড়ি ফিরেই শিক্ষা সংক্রান্ত নিজের যাবতীয় নথি, শংসাপত্র পুড়িয়ে ফেলেন। অসংলগ্ন কথাবার্তাও বলতে শুরু করেন। ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে বুঝতে পেরে পরিবারের শেষ সম্বল দু’বিঘে জমি বন্ধক দিয়ে তাঁর চিকিৎসা শুরু করান ভারতী। এক সময় সঞ্চয়ে টান ধরে। বন্ধ করতে হয় প্রশান্তর চিকিৎসাও। ভারতী বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই পালিয়ে যেত প্রশান্ত। কিছুতেই ঘরে আটকে রাখা যেত না। বাড়ি চিনে ফিরে আসতে না পারবে না ভেবে আশঙ্কায় বুক কাঁপত। অগত্যা ওকে শিকলে বেঁধে রাখতে শুরু করি। মা হয়ে ছেলেকে শিকলবাঁধা অবস্থায় দেখতে যে কী কষ্ট হয়! ছেলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, এটাই তো চাই।’’

প্রশান্তকে শিকলবাঁধা অবস্থায় দেখে চমকে উঠেছিলেন তাঁর এককালের সহপাঠীরা। তাঁরাই প্রশান্তর ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে পোস্ট করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। প্রশান্তর চিকিৎসার বিষয়ে শনিবার দুপুরে সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বৈঠক করেন স্থানীয় ব্লক প্রশাসন, ব্লক স্বাস্থ্য দফতর এবং সিমলাপাল পঞ্চায়েত সমিতির আধিকারিকেরা। প্রশান্তর পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন সিমলাপাল পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ কাঞ্চন পাল। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার প্রশান্তকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে চিকিৎসার পর প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে দেব। ওই পরিবারকে কোনও সরকারি প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা যায় কি না, তা-ও দেখব।’’

প্রশান্তর বন্দিদশার কথা শুনেছেন স্থানীয় বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘ প্রশান্তর পরিবারকে যাবতীয় সাহায্যের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি, থানা ও ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। ওই যুবকের চিকিৎসা যাতে যথাযথ হয়, তা-ও দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Viral adivasi Simlapal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy