Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Mid day Meal

৫ টাকা ৪৫ পয়সায় কি চলে!

ঘটনা হল, যে সব স্কুলে পড়ুয়া বেশি, সেখানে সমস্যা তুলনায় কম। তবে মূলত পঞ্চাশের নীচে পড়ুয়া থাকা স্কুলগুলি মিল নিয়ে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে।

সপ্তাহে এক বার ডিম, বাকি দিন সয়াবিন, সব্জি। বান্দোয়ানের একটি স্কুলে মিড-ডে মিলের খাবার (উপরে)। 

সপ্তাহে এক বার ডিম, বাকি দিন সয়াবিন, সব্জি। বান্দোয়ানের একটি স্কুলে মিড-ডে মিলের খাবার (উপরে)।  তবে ডিম নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। বান্দোয়ানে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, তারাশঙ্কর গুপ্ত
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৭
Share: Save:

আনাজের দামবৃদ্ধি শুধু বাজারের ব্যাগেই আগুন ধরায়নি, চিন্তা বাড়িয়েছে মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতেও।

জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মিড-ডে মিল চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার শিক্ষকদের বড় অংশ। কোথাও বাড়ছে ধারের খাতা তো কোথাও পকেট থেকে ভর্তুকি দিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকেরা।

ঘটনা হল, যে সব স্কুলে পড়ুয়া বেশি, সেখানে সমস্যা তুলনায় কম। তবে মূলত পঞ্চাশের নীচে পড়ুয়া থাকা স্কুলগুলি মিল নিয়ে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের প্রশ্ন, পড়ুয়াপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা বরাদ্দ ধরলে তিরিশ জন পড়ুয়ার স্কুলে মোট বরাদ্দ দৈনিক ১৬৩ টাকার মতো। তার মধ্যে পঞ্চাশ টাকা খরচ হয় জ্বালানিতে। বাকি ১১৩ টাকায় কী ভাবে তিরিশ জনকে খাওয়ানো সম্ভব! বাঁকুড়ার বড়জোড়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মণ্ডলের কথায়, “সরকার নির্ধারিত তালিকা মেনে খাওয়াতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের খাবারে কাটছাঁট করা অসম্ভব। বাধ্য হয়ে নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে। ফি মাসে দেড়-দু’হাজার টাকা ভর্তুকি লাগছে।”

হাই স্কুলগুলিরও বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, যেখানে একটা ডিমের দাম ৭ টাকা, আলু ৩২ টাকা কেজি, সেখানে সরকার নির্ধারিত তালিকা মেনে মিড-ডে মিল চালানো কার্যত অসম্ভব। কিছু স্কুল জানায়, বাজারে একমাত্র লাউ-কুমড়ো তুলনায় সস্তা। তাই কোনও দিন ডালের সঙ্গে লাউ-আলুর তরকারি বা শুধু খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে। এতে মশলা, জ্বালানির খরচ কিছুটা বাঁচছে। কিছু শিক্ষকের দাবি, অলিখিত নির্দেশ রয়েছে, কোনও মতে মিড-ডে মিলটা চালিয়ে নিয়ে যেতে। কোনও ভাবেই দুপুরের খাবার বন্ধ করা চলবে না।

গত বছরে রাজ্য সরকার মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাবারের জন্য পড়ুয়াপিছু চার মাসে ৩২০ টাকা করে বরাদ্দ করেছিল। পড়ুয়াদের সকলে উপস্থিত না হওয়ায় সেই টাকার একাংশ খরচ হয়নি অনেক স্কুলেই। দাবি উঠছে, সেই টাকা মিড-ডে মিলে খরচ করা হোক। তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের পুরুলিয়ার আদ্রা চক্রের সভাপতি সিদ্ধার্থ পাল বলেন, “গত বছরের পড়ে থাকা ওই টাকা শিক্ষা দফতর খরচের অনুমতি দিলে অনেক স্কুলেরই কিছুটা সুরাহা হত।”

একই ছবি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিরও। সেখানে চাল, ডাল সরবরাহ করে প্রশাসন। বাকি খরচের জন্য প্রসূতি ও শিশু প্রতি বরাদ্দ থাকে সাড়ে ৭ টাকা। তার মধ্যে আবার ডিম দেওয়া অপরিহার্য। অনেক কেন্দ্র জানাচ্ছে, যে দিন খিচুড়ি দেওয়া হয়, সেদিন প্রসূতি প্রতি আলু বরাদ্দ থাকে পঞ্চাশ গ্রাম। আনাজের জন্য দেওয়া হয় প্রসূতি প্রতি মাত্র ২৩ পয়সা। তাতে কি আনাজ কেনা সম্ভব প্রশ্ন, উঠছে প্রশ্ন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির রাজ্যের কার্যকরী সভানেত্রী ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “মে মাস থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির আনাজ ও ডিমের দাম বকেয়া রয়েছে। ধারের উপরে ধার বাড়ছে। বর্তমান যা বাজার দর তাতে এ বার ধার পেতেও সমস্যা হচ্ছে। সরকার পদক্ষেপ করুক।”

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE