বাঁকুড়ায় বন্যা পরিদর্শনে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
বন্যা কবলিত গ্রামে এলেন তিনি। ঘুরে দেখলেন ক্ষয়ক্ষতি। দ্রুত কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাসও দিলেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের কাছে অধরাই রইলেন তিনি। পুলিশ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে তাঁরা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতেই পারলেন না নিজেদের দুর্দশার কথা। বাঁকুড়ার বন্যাবিধ্বস্ত সোনামুখী ব্লকের সমিতিমানায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তিকার সফর শেষে আক্ষেপই ঝরে পড়ল বাসিন্দাদের কথায়।
সোমবার সকালে সায়ন্তিকার নেতৃত্বে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল সমিতিমানায় যায়। সায়ন্তিকা যে আসবেন, সে খবর সকাল থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামে। নিজেদের দুর্দশার কথা বলতে যুব সমিতি ক্লাবের সামনে হাজির হয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ১৭০টি পরিবার। নির্দিষ্ট সময়ে সায়ন্তিকা পৌঁছন। সঙ্গে তৃণমূল নেতা সমীর চক্রবর্তী, দলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা, দলের যুব সংগঠনের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্চিতা বিদ। ছিলেন সোনামুখী ব্লকের তৃণমূলের ছোট-বড় অনেক নেতা-নেত্রী। মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। প্রতিনিধি দলটি গ্রামে পৌঁছতেই পুলিশ দড়ি দিয়ে অস্থায়ী ব্যারিকেড তৈরি করে। ওই ব্যারিকেডের ভেতরে থেকেই গ্রাম ঘুরে দেখেন সায়ন্তিকারা। রাস্তার বেহাল দশা থেকে শুরু করে জমি ও বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির ছবি নিজের মোবাইলে তোলেন অভিনেত্রী। পুলিশের ব্যারিকেডের ফাঁক গলে কাছে চলে আসা দু’এক জন নিজস্বী-শিকারির আবদারও মেটান। এর পর ফের গাড়িতে উঠে গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েন সায়ন্তিকা।
তৃণমূলের প্রতিনিধি দল গ্রাম থেকে চলে যেতেই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ক্ষোভ দেখান। স্থানীয় বধূ জয়মালা বিশ্বাস বলেন, “সায়ন্তিকা অভিনেত্রী। কিন্তু আজ আমরা অভিনেত্রী হিসাবে তাঁকে দেখতে আসিনি। দুর্দশার কথা বলব বলে সকাল থেকে অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু সে সুযোগই পেলাম না।’’
দামোদরের একেবারে ধারে সমিতিমানা। সামান্য একটা বালির বাঁধ নদ থেকে আলাদা করে রেখেছিল সমিতিমানাকে। কিন্তু দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়া শুরু হলে শনিবার সকাল থেকে একটু একটু করে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। ওই দিন বিকেলেই জলের চাপে বাঁধের প্রায় চল্লিশ ফুট অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লে হু হু করে গ্রামে ঢুকে পড়ে দামোদরের জল। ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। জল পৌঁছে যায় বাড়ির উঠোনেও। সোমবার সকাল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজে জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমতেই সমিতিমানা থেকে নামতে শুরু করে জল। গ্রামের জলমুক্তি ঘটলেও এখনও ক্ষেত ডুবে রয়েছে হাঁটু জলে। অনিমা ভক্ত নামে অন্য এক বধূ বলেন, “সায়ন্তিকা গ্রামে এসেছিলেন। পুলিশ তাঁকে যে দিকে নিয়ে গেল সে দিকেই তিনি গেলেন। আমাদের কোনও কথাই শুনলেন না। আক্ষেপ রয়ে গেল। এত কাছে পেয়েও তাঁকে আমাদের দুর্দশার কথাটা জানাতেই পারলাম না।’’
সায়ন্তিকার এই সফরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি। তিনি বলেন, “সমিতিমানা এলাকার বন্যার সমস্যা আজ নতুন নয়। প্রতি বছর বন্যা হলেও কোনও সরকার সেই বন্যা প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়নি। এ বার দেখছি ওই এলাকায় সেলিব্রিটিকে দিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুনলাম তিনি স্থানীয় মানুষের কথাই শোনেননি।’’
পরে যদিও সায়ন্তিকা বলেন, “এখানে ফসলের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের দুঃখের শেষ নেই। এই গ্রাম পুরোপুরি জলমগ্ন ছিল। এখন জল নামলেও গোটা গ্রাম জুড়ে শুধুই কাদা। এখানকার মানুষকে কী ভাবে সুরাহা দিতে পারি তা দেখতেই মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা তাঁর কাছে রিপোর্ট দেব। পাশাপাশি জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy