অগ্নিগর্ভ: আনাড়ায় গাড়ির আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। ছবি: সঙ্গীত নাগ
ছেলেধরার গুজবকে কেন্দ্র করে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে শুক্রবার তেতে উঠল পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের আনাড়া। ছেলেধরা সন্দেহে ঝাড়খণ্ডের বোকারোর বাসিন্দা মহম্মদ নিজাম নামে এক বৃদ্ধকে বেদম মারধর করে জনতা। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বৃদ্ধকে উদ্ধার করে আনাড়া ফাঁড়িতে নিয়ে গেলে মারমুখী জনতা সেখানেও হামলা চালায় বলে অভিযোগ। জনতার মারে জখম হন পাড়া থানার ওসি-সহ জনা পাঁচেক পুলিশ কর্মী। পাল্টা পুলিশও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়, লাঠি চালায়। বেলা ১০টা থেকে দফায় দফায় গোলমাল চলে বিকেল ৩টে পর্যন্ত। বাহিনী নিয়ে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন ও এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি সামাল দেন।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘ছেলেধরার গুজবকে কেন্দ্র করে সব ঘটেছে। পুলিশের উপরে আক্রমণ ও ফাঁড়ি ভাঙচুরের তদন্ত চলছে।’’ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হামলায় নিজামের মাথা ফেটেছে। তাঁর পিঠে, কাঁধে, বুকে আঘাত রয়েছে। রঘুনাথপুর হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। পাড়া থানার এক এএসআইয়ের মাথা ফেটেছে। তিনি-সহ মোট তিন পুলিশ কর্মী পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার জয়পুরের বাসিন্দা ময়না মাঝির মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আনাড়ার পাশের রামপুরে। পেটের ব্যথায় মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে শুনে ক’দিন আগে ময়না সেখানে যান। ঝাড়খণ্ড থেকে এক জানগুরু ক’দিন আগে ওই যুবতীর ঝাড়ফুঁক করে যান বলে খবর। হাসপাতালে নিজাম দাবি করেন, ‘‘ময়নার মেয়েকে ঝাড়ফুঁক করে গুরুজি পুরো টাকা পাননি। গুরুজির পাঠানো গাড়িতে সেই টাকা নিতেই ময়নার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু তিনি কম টাকা দেওয়ায় বচসা হয়। সেই সময় ময়না চিৎকার চেঁচামেচি করায় লোকজন এসে আমাকে মারধর করতে শুরু করে। চালক কোথায় পালিয়ে যায়। বিনাদোষে আমি মার খেলাম।’’ যদিও ময়না দাবি করেছেন, ‘‘নিজামকে চিনি না। এ দিন মেয়েকে নিয়ে রেলের স্কুলের সামনে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই লোকটি কোথা থেকে এসে মেয়েকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। ভয়ে চিৎকার করি।’’
গত ক’দিন ধরেই পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ আইন হাতে না নিতে প্রচার চালালেও তা তোয়াক্কা না করে সন্দেহ হওয়ায় কয়েকজনকে মারধর করেছে জনতা। এ দিন আনাড়াতেও ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ভাঙচুর চালায় নিজামের গাড়িতে।
কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে অল্প কয়েকজন পুলিশ ছিলেন। তাঁরা নিজামকে উদ্ধার করে আনতেই, শতাধিক লোকজন ফাঁড়ি ঘেরাও করে। দাবি করে, নিজামকে তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ ফাঁড়ির সদর দরজা বন্ধ করে নিজামকে ভিতরে রাখে। অভিযোগ, জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ফাঁড়িতে হামলা চালায়। ভেঙে দেয় ফাঁড়ির পাঁচিল। ভাঙচুর চালানো হয় সাইকেল ও মোটরবাইকে। কয়েকজন ফাঁড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেয়। ফাঁড়ির টিভিও কয়েকজন তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এমনকি, ফাঁড়ির মধ্যে থাকা নথিপত্রও ছিঁড়ে নষ্ট করে বলে দাবি পুলিশের।
পাড়া থানার ওসি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছলে জনতা তাঁর উপরেও চড়াও হয়। পরে এসডিপিও বাহিনী নিয়ে সেখানে পৌঁছয়। ফাঁড়ি ঘেরাওমুক্ত করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ। এর পরেই দুপুরে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে বসে পড়ে জনতা। বাহিনী গিয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ময়নাকে আটক করা হয়। তাঁর মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy