বিনা-মেঘে: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ছবি: শুভ্র মিত্র
দ্রুত গতিতে ডান দিকে গিয়ে ফুটপাতে উঠে তিন জনকে ধাক্কা মারল একটি গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল বাবা ও ছেলের। আহত হলেন আরও এক জন। বৃহস্পতিবার ভোরে সোনামুখী পুরভবনের উল্টোদিকের ফুটপাতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভাড়া করা ওই গাড়ির চালককে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন বাসিন্দারা। ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোনামুখী থানার সামনে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান মৃতদের আত্মীয়েরা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন অবিনাশ মণ্ডল (৫০) ও তাঁর ছেলে অভিজিৎ মণ্ডল (২৩)। তাঁদের বাড়ি পাত্রসায়র ব্লকের হোদলনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বাঁকশিল্লামানায়। গুরুতর আহত অশোক বাগদিকে প্রথমে সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। অশোকবাবুর বাড়ি বাঁকশিল্লামানার কাছে, বারাসাতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখী বাজারে মাছ কিনতে এসেছিলেন তিন জনে। বাজারে যাওয়ার আগে সোনামুখী পুরভবনের উল্টোদিকের নিকাশি নালার উপরের চাতালে দাঁড়িয়ে হিসেবনিকেশ করছিলেন তাঁরা। আনুমানিক ভোর পাঁচটা নাগাদ উল্টোদিকের একটি গাড়ি দ্রুত বেগে এসে ফুটপাতে উঠে তাঁদের তিন জনকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়েরা চালককে আটক করে। পুলিশ গিয়ে তিন জনকে সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বাবা ও ছেলেকে মৃত বলে জানান।
দুর্ঘটনার পরে তেতে ওঠে এলাকা। খবর পেয়ে মৃতদের গ্রাম থেকে অনেকে সোনামুখী ছুটে আসেন। তাঁরা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মৃত অভিজিতের মামা অমল হালদার বলেন, “পথচারীদের নিরাপত্তা কোথায়? রাস্তা থেকে সরে দাঁড়িয়েও মরতে হল জামাইবাবু ও ভাগ্নেকে। রোজগার করার কেউ রইল না। সংসারটা ভেসে গেল। ক্ষতিপূরণের আশ্বাস না পেলে অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।” সোনামুখী থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় ক্লোজ়ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা রয়েছে। তার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে দুর্ঘটনার তদন্ত করা হবে। আপাতত গাড়িটি আটক করা হয়েছে। দেহ দু’টিকে ময়না-তদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃতদের পরিবার এ দিন বিকেল পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেনি। চালককে আটক করে রাখা হয়েছে।
বাসিন্দারা দাবি করেন, গাড়িটি সোনামুখী থেকে বেরিয়ে বর্ধমানের দিকে যাচ্ছিল। সেই অবস্থায় গাড়িটি কী ভাবে রাস্তার ডানদিকে গিয়ে ফুটপাতে উঠে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এলাকায়। ঘটনাস্থলের কাছেই দোকান সুপ্রিয় পাল ও নিমাই কর্মকারের। তাঁরা বলেন, ‘‘এখানে না ক্রেতা, না বিক্রেতা— কারও নিরাপত্তা নেই।’’ তবে অনেকের দাবি, ওই চালক নেশা করে ছিলেন।
বাসিন্দাদের দাবি, গাড়িটি ভাড়ায় খাটানো হলেও সামনে সরকারি কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে বোর্ড লাগানো ছিল। সরকারি কাজে ব্যবহার করা গাড়ি ট্র্যাফিক নিয়ম ভাঙল কী করে? প্রশ্ন উঠেছে সোনামুখীতে।
সোনামুখীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রিয়কুমার সাহানা বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে দু’টি গাড়ি ভাড়ায় সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দিয়েছে। কিন্তু কোনও ভাবেই চিকিৎসক না ওঠা পর্যন্ত ওই গাড়িতে সরকারি কাজে ব্যবহারের বোর্ড লাগানোর নিয়ম নেই।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরেই গাড়ির সামনে থাকা ওই বোর্ডের লেখা ঘষে তুলে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy