Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘর গোছাতে তৃণমূলের ‘পাঠশালা’

নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক মানোন্নয়নে ‘পার্টি-ক্লাস’-এর চল বাম দলগুলির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সেই চল তৃণমূলের মধ্যে এত দিন কার্যত ছিল না বললেই চলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয় সামলাতে জোড়া দাওয়াইয়ের পথে হাঁটতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এক দিকে যেমন বুথ কমিটিগুলিকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তেমনিই বুথ স্তর থেকে শুরু করে ব্লক এবং জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক মানের আরও উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সম্প্রতি রঘুনাথপুরের দলের শ্রমিক সংগঠনের কর্মিসভায় এই রাজনৈতিক শিক্ষা-শিবির করার ব্যাপারে দলীয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।

নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক মানোন্নয়নে ‘পার্টি-ক্লাস’-এর চল বাম দলগুলির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সেই চল তৃণমূলের মধ্যে এত দিন কার্যত ছিল না বললেই চলে। তাহলে হঠাৎ করে কেন বামেদের ধাঁচে এই শিক্ষা শিবির করতে চাইছে তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব?

শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত নয় বছরে রাজ্যের প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকার জন্য কত প্রকল্প চালু হয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়নও প্রভূত হয়েছে। তা নিয়ে সর্বস্তরে প্রচার করতে পারেননি কর্মীরা। এমনকি বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচারেও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলোও ঠিক মতো তুলে ধরা যায়নি। শিক্ষা-শিবির সেই প্রচারের কৌশলই

শেখানো হবে।’’

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, টানা কয়েক বছর পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সমিতি, জেলা পরিষদের ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের কর্মীদের একাংশের মধ্যে একদিকে যেমন আত্মসন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে, তেমনই ক্ষমতা ভোগের নানা ক্ষতিকারক দিক বিশেষত জনবিচ্ছিন্নতাও তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। সাংগঠনিক কাজকর্মে ঢিলেমি দিচ্ছেন দলের কিছু নেতাও। সে সব দূর করতেই শিক্ষা-শিবিরের পরিকল্পনা।

তৃণমূলের এক শীর্ষ জেলা নেতার কথায়, ‘‘বিরোধী শিবিরে থাকার সময়ে আমাদের নিচুতলার নেতা-কর্মী থেকে ব্লক ও জেলাস্তরের নেতারা যে ভাবে জনসংযোগের উপরে জোর দিতেন, সমস্যায় পড়া লোকজনের পাশে দাঁড়াতেন, ক্ষমতায় আসার পরে সেই অভ্যাস ভুলেছেন অনেকেই। তাই শিক্ষা-শিবিরের প্রয়োজন ভীষণ ভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে।’’

দল সূত্রের খবর, জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ওই শিবির শুরু হতে চলেছে। প্রথমে শিবির হবে ব্লক স্তরে। ব্লক সম্পূর্ণ হওয়ার পরে জেলাস্তরে শিক্ষা-শিবির করা হবে। ব্লকগুলিতে শিবির পরিচালনা করবেন জেলাস্তরের নেতারাও। জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, জেলার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনকে বাছা হয়েছে শিবির পরিচালনা করার জন্য। জেলাস্তরের শিবিরের ক্ষেত্রে পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্বের কথা ভাবা হয়েছে।

কী শেখানো হবে শিবিরে? শান্তিরামবাবু জানাচ্ছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের সংগঠনের কাজকর্ম কী ভাবে করতে হবে, তাঁদের হাতে থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়নমুখী করে তোলার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই সঙ্গে নিজেদের ভুল শুধরে কী ভাবে আরও নিবিড় জনসংযোগ করবেন নেতারা, সেই দিকগুলি শেখানো হবে।

এ জন্য বুথ ও পঞ্চায়েত স্তর থেকে সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে, এমন চার-পাঁচ জন নেতা-কর্মীকে বেছে নিয়ে তাঁদের আনা হবে শিক্ষা শিবিরে।

লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ায় দলের বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সরকারের উন্নয়ন নিয়ে সেই অর্থে নিচুস্তরে প্রচারই হয়নি। সেই সুযোগ নিয়ে বিজেপির কর্মীরা গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। তাই গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের বিবরণ পৌঁছে দিতে শিবিরে কর্মীদের জোর দেওয়া হবে। সেখানে কী কী বলা হবে, কী ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে, তার আগাম উত্তরও জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন শান্তিরামবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

RAghunathpur TMC Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy