গবাদি পশুকে খাওয়াচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
তৃণমূল কর্মী খুনে এখনও ধরা পড়েনি কেউ। কিন্তু, পুলিশি ধরপাকড়ের আশঙ্কায় রামপুরহাটের রদিপুর গ্রামের লেটপাড়া কার্যত পুরুষশূন্য। কারণ, অভিযুক্তদের সকলের বাড়ি লেটপাড়াতেই। অধিকাংশ বাড়িতেই লোক নেই। বাড়ির পোষা গরুগুলির দেখভাল আপাতত করছেন রামপুরহাট থানার পুলিশকর্মীরাই। গরুগুলিকে খড়, খাবার জলের জোগান দিচ্ছেন ওই গ্রামে মোতায়েন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার।
রবিবার রাতে লেটপাড়ার একটি ক্লাবের বারান্দায় দেহ উদ্ধার হয় রদিপুর গ্রামের ঘোষপাড়ার তৃণমূলকর্মী মধুসূদন ঘোষের। নিহতের ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাজু লেট, জিতু লেট, ভোলানাথ লেট-সহ জনা ১৫ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে। খুনের ঘটনার জেরে লেটপাড়ায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালানো এবং খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু, ঠিক কী কারণে পেশায় দুধ ও ছানা ব্যবসায়ী মধুসূদন খুন হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ এখনও ধোঁয়াশায়।
বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, লেটপাড়ার মনসাতলার কাছে যে ক্লাবের বারান্দায় মধুসূধনের দেহ পড়েছিল, সেই ক্লাবের কাছের গলিতে এক জন পুলিশ কর্মী এবং ক্লাবের সামনে এক জন পুলিশকর্মী মোতায়েন। রয়েছেন দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিযুক্তদের অধিকাংশের বাড়িতে তালা। বালতি করে জল নিয়ে আসছেন সিভিক ভলান্টিয়ার। পুলিশকর্মীদের হাতে খড়-বিচালি। সেই খড় আর জলই দেওয়া হচ্ছে অভিযুক্তদের বাড়ির পোষা গরু-ছাগলকে। এক অভিযুক্তদের বাড়িতে থাকা এক মহিলা জানালেন, যে-সব বাড়ি তালাবন্ধ, এমন বাড়ির গরু-ছাগলকে পুলিশ দেখভাল করছে। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘এই কাজ করতে হবে, কোনও দিন ভাবিনি! বাড়িতে লোক নেই। গরু-ছাগল তো অবলা। তাই আমরাই জোগাড় করে খড় আর জল দিচ্ছি ওদের।’’
শুনসান পাড়ার মধ্য দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বনহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের রদিপুর সংসদের তৃণমূল সদস্য অভিজিৎ লেট। তাঁর দাবি, ‘‘মধুদা ছিলেন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। যারা ওঁকে খুন করেছে, তারা সকলে সিপিএম করে। ওরা গ্রামের বাইরে আছে। গ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ মোতায়েন আছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’’
লেটপাড়ার ভিতরে ঢুকে দেখা বেশ কিছু বাড়িতে মহিলারা আছেন। তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্ক। তাঁরা জানালেন, বাড়িতে ছেলেরা নাই। সকলেই দিনমজুর। ঘটনার রাত থেকে আতঙ্কে সকলে বাড়ি ছাড়া। পুরুষ সদস্য না থাকায় ঘরে রোজগারও বন্ধ। অনেক বাড়িতেই রান্নাবান্না প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘পাড়ার মুদির দোকান ঘটনার পরের দিন থেকে বন্ধ। ছেলেরা নির্দোষ। কিন্তু ভয়ে বাড়ি ছাড়া। এক পোয়া মুড়ি পরের বাড়ি থেকে ধার করে নিয়ে এসে দিন কাটছে।’’ আর এক মহিলা বললেন, ‘‘ঘটনার রাতে ঘোষপাড়ার লোকজন আমার বাড়ির এবং আশপাশের অনেকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এর ফলে সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। আবার গরু-ছাগলের মায়ায় বাড়ি ছেড়ে যেতেও পারছি না।’’
লেটপাড়ার শুনসান পরিবেশ পেরিয়ে নিহত মধুসূধন ঘোষের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মেঝেয় রাখা চৌকিতে আত্মীয়দের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন তাঁর স্ত্রী। ছেলে কৃষ্ণজীবন ঘোষকে ঘিরে পরিজন ও পড়শিরা। কৃষ্ণজীবন বলেন, ‘‘বাবাকে পিটিয়ে মারা হল সেই রবিবার। তিন দিন পেরিয়ে গেল। অথচ পুলিশ এখনও পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না।’’ পরিবারের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ রদিপুরে খালি বসে থাকছে। অভিযুক্তেরা গ্রামের বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু তৎপরতা দেখালেই দোষীরা ধরা পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy