Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

যন্ত্রে কাজ নয়, কড়া জেলাশাসক

পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে এ দিন একশো দিন কাজের প্রকল্প সম্পর্কিত একটি কর্মশালায় জেলাশাসক বলেন, ‘‘কাজের খোঁজে পুরুলিয়ার মানুষকে ভিন‌্-রাজ্যে যেতে হয়। কাজ না পেলে তাঁরা কী করবেন? পুজোর আগে শ্রমদিবসের সংখ্যার নিরিখে এ কাজে গতি খানিকটা বাড়লেও পুজোর ছুটির কারণে এই গতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’

আড়শার উপরগুগুই গ্রামে একশো দিনের কাজ। নিজস্ব চিত্র

আড়শার উপরগুগুই গ্রামে একশো দিনের কাজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

যন্ত্র দিয়ে কোনও ভাবে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ করা যাবে না, মানুষকে কাজ দিতে হবে। শুক্রবার জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের এই নির্দেশ দিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। এ ব্যাপারে কোনও অজুহাত শোনা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শ্রমিকেরা আবেদন করেও কাজ না পেলে তাকে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ বলেই গণ্য করা হবে।

পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে এ দিন একশো দিন কাজের প্রকল্প সম্পর্কিত একটি কর্মশালায় জেলাশাসক বলেন, ‘‘কাজের খোঁজে পুরুলিয়ার মানুষকে ভিন‌্-রাজ্যে যেতে হয়। কাজ না পেলে তাঁরা কী করবেন? পুজোর আগে শ্রমদিবসের সংখ্যার নিরিখে এ কাজে গতি খানিকটা বাড়লেও পুজোর ছুটির কারণে এই গতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’

এ জেলার মানুষ কাজ চান—প্রত্যন্ত ব্লকের একাধিক গ্রামে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর এমনটাই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে দাবি জেলাশাসকের। শুক্রবার কর্মশালার পরে তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহের গোড়ায় আমি একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। আমাকে জানানো হয়েছিল, সেই পঞ্চায়েত এলাকায় সে দিন এই প্রকল্পে ১৪০ জন কাজ করছেন। কিন্তু জনা সত্তর মানুষ কাজ করছেন বলে আমার চোখে পড়ে। সে দিন নির্দেশ দিয়েছিলাম, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় এই প্রকল্পে কত জন মানুষ কাজ করছেন প্রতিদিন সকালে তা হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে জানাতে।’’ তিনি জানান, পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, প্রথম দিন শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৪৭। তারপরে সেই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ১৭১, ৪২৭ এবং ৫১১। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘আসলে চেষ্টা করলে মানুষকে কাজ দেওয়া যায়।’’

একই ভাবে, প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে জেলাশাসক দেখেছেন, কেউ ২০১৩ সালের পরে আবার ২০১৯ সালে কাজ পেয়েছেন। এমন অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘অথচ ওই পঞ্চায়েতেও নির্মাণ সহায়ক ছিলেন। এটা কেন হবে?’’ পুজোর আগে অযোধ্যা পাহাড়তলির একটি গ্রামে গিয়েও জেলাশাসককে কাজ না পাওয়ার অভিযোগ শুনতে হয়েছিল। অভিযোগ পেয়েছিলেন যন্ত্র দিয়ে কাজ করানোর। স্থানীয় কিছু লোকজন দাবি করেছিলেন, বাধ্য হয়েই তাঁরা ভিটেমাটি ছেড়ে ভিন্-রাজ্যে কাজের খোঁজে যান। গ্রামে কাজ পেলে তাঁরা যে গ্রামে থাকবেন সে কথাও শ্রমিকেরা জেলাশাসককে জানান।

এ দিন নির্মাণ সহায়কদের জেলাশাসক জানিয়ে দেন, মাস্টার রোলে ‘চুরি’, কাজ করার পরে জব-কার্ডে না তোলা, কেউ কাজ চাইলে কাজ না দেওয়া কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এর পরেই যন্ত্র দিয়ে কাজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আধিকারিকদের কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতির বিচারে বাধ্য হয়েই যন্ত্র দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। আমি পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করছি, এই কাজ করলে কেউ নিজ দায়িত্বে করবেন। মানুষের বদলে যন্ত্র দিয়ে কাজ হলে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করবে। আর সৎ ভাবে কাজ করতে গিয়ে কেউ সমস্যার মুখোমুখি হলে প্রশাসন তাঁর পাশে দাঁড়াবে।’’

এ দিন প্রকল্পের গতি বাড়াতে একটি নির্দেশও জারি করেছে প্রশাসন। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিডিও বা যুগ্ম বিডিও-র মধ্যে কেউ প্রতিদিন ব্লক এলাকায় প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যাবেন। প্রতি মঙ্গলবার মহকুমাশাসকেরা নিজেদের মহকুমায় পরিদর্শনে যাবেন। আর অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা যে কোনও দিন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যেতে পারেন। এ দিন কর্মশালায় বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্পে কর্মরত ‘আবাসবন্ধু’রাও হাজির ছিলেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এ বার আমরা এই প্রকল্পে জেলায় ৫০ হাজার বাড়ি তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। ৪৬ হাজারের অনুমোদন মিলেছে। বাকিটাও আশা করা যায় হয়ে যাবে।’’ তিনি জানান, একটি বাড়ি তৈরির কাজে ৯৫টির মতো শ্রমদিবস তৈরি হয়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সঙ্গে বাড়ি নির্মাণের কাজ জুড়তে পারলে দু’টি কাজেরই গতি বাড়বে বলে তাঁর আশা।

গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন বিডিওদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে প্রতিদিন ৫০ হাজার শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন জেলাশাসক। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নোডাল অফিসার সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা ছিল, প্রতিদিন ৫০ হাজার কর্মদিবসের। আমরা এখন ৫৪ হাজারে পৌঁছেছি। এটা আমরা ধরে রাখব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy