Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অযোধ্যা নিয়ে বিতর্কে সাংসদ

পাহাড় নিয়ে কথিত এই পুরা-কথাকে (মাইথোলজি) সাংসদ কীসের ভিত্তিতে ইতিহাস বললেন, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

মন্ত্রীর হাতে চিঠি তুলে দিচ্ছেন জ্যোতির্ময়বাবু। নিজস্ব চিত্র

মন্ত্রীর হাতে চিঠি তুলে দিচ্ছেন জ্যোতির্ময়বাবু। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার তাঁর এলাকার অযোধ্যা পাহাড়ের উন্নয়ন করছে না বলে অভিযোগ তুলে দিল্লির সাহায্য চেয়ে কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে হিন্দিতে লেখা চিঠিতে তিনি অযোধ্যাপাহাড়কে ‘ঐতিহাসিক স্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন, ‘বনবাসের সময়ে রাম অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন। সীতার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মাটিতে তির মেরে জলের ধারা বের করেন। সেই স্থান এখন ‘সীতাকুণ্ড’ নামে পরিচিত’। পাহাড় নিয়ে কথিত এই পুরা-কথাকে (মাইথোলজি) সাংসদ কীসের ভিত্তিতে ইতিহাস বললেন, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং পটেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই চিঠি দেন বলে জানিয়েছেন জ্যোর্তিময়। আইনে স্নাতক সাংসদের দাবি, ‘‘অযোধ্যা পাহাড়ের সবাই রাম-সীতার এখানে আসার কথা জানেন। সেটাই উল্লেখ করেছি। তাতে পাহাড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝানো যায়।’’ অযোধ্যা পাহাড় যাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সেই বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর মন্তব্য, ‘‘পাহাড়ে রাম-সীতার আসা নিয়ে লোককথা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য নেই।’’ তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটনমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার জন্য সাংসদকে ধন্যবাদ। কিন্তু রামচন্দ্রকে এখানে টানা কেন? লোক-কথাকে ইতিহাস বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা কি ঠিক?

বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ‘সীতাকুণ্ড’ নামের একটি প্রস্রবণ রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে ঘন জঙ্গল। যদিও জেলার লোক-গবেষক সুভাষ রায় বলেন, ‘‘রামচন্দ্র বা সীতার পাহাড়ে আসার কোনও প্রামাণ্য নথি আমি অন্তত পাইনি।’’ জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামীর মতে, ‘‘লোককথা আর ইতিহাস এক নয়। দু’টোকে মিশিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’’ তিনি জানান, ইতিহাসে মহাবীর ও অশোক পুরুলিয়ার এসেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু রামায়ণ বা মহাভারতের কোনও চরিত্রের এই জেলায় পা পড়েছিল বলে কোনও ইতিহাসভিত্তিক তথ্য নেই। রামায়ণেও এখানকার উল্লেখ নেই। কোনও এক ভূমিজ রাজার নামে অযোধ্যা পাহাড় নামকরণ হয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন।

চিঠিতে সাংসদ অভিযোগ করেছেন, ‘‘ইতিহাসের যতটা গুরুত্ব রয়েছে, সেই তুলনায় অযোধ্যা পাহাড়ের উন্নয়ন হয়নি। এলাকাটি আমার সংসদের মধ্যে পড়ে বলে তৃণমূল সরকার উদাসীন।’’ এই প্রেক্ষিতে তিনি এখানকার পর্যটনের উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। তা নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, তৃণমূলের আমলে পর্যটনের বিকাশে শিরকাবাদ থেকে উঠে পাহাড় ঘুরে বাঘমুণ্ডি নামার জন্য ৩২ কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে। বর্তমানে তা চওড়া করা হচ্ছে। পাহাড়ের বেশ কিছু গ্রামে পাকা ও ঢালাই রাস্তা হয়েছে। বলরামপুরের ঘাটবেড়া থেকে উঠে ঝালদার খামারে নামার নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। পুরুলিয়া শহর থেকে সরকারি বাস চালু হয়েছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীন ‘সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ’-এর অতিথি আবাসের সংস্কার করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হোটেল। শীতকালে হয় অযোধ্যা উৎসব। তেলিয়াভাসায় নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েছে। বহু গ্রামে হয়েছে বিদ্যুদয়ন।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘সাংসদ রাজনীতিতে নতুন বলে অযোধ্যা পাহাড় সম্পর্কে সব খবর জানেন না। ২০১১ সাল থেকে ধাপে ধাপে পাহাড়ের প্রচুর উন্নতি হয়েছে। এখন বছরভর পর্যটক আসছেন।’’ কংগ্রেস বিধায়ক নেপালবাবুর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতিই কয়েক মাস আগে অযোধ্যাপাহাড়ে এসে একটি বেসরকারি হোটেলে ওঠেন। পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে বলেই তো তিনি সেখানে রাত্রিবাস করতে পারেন।’’ ঘটনা হল, সে বারও দিলীপবাবু, ওই এলাকার উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। নেপালবাবুর দাবি, ইউপিএ সরকারের তৎকালীন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের কাছে তিনি আর্জি জানানোয় পাহাড়ের উন্নয়নে বরাদ্দ এসেছিল। সে কথা বর্তমান সাংসদের জানা উচিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Jyotirmoy Singh Mahato Ajodhya Hills BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy