নবজোয়ার কর্মসূচিতে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় এসে কুড়মি-আঁচ টের পান দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কুড়মিদের দাবির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকার এত দিন যা যা পদক্ষেপ করেছে, তা কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে আরও বেশি করে তুলে ধরতে চলেছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল। কুড়মি-বিক্ষোভের আবহে পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের অবস্থান কুড়মি সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হবে বলে মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলার কুড়মি সম্প্রদায়ের তৃণমূল নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নবজোয়ার কর্মসূচিতে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় এসে কুড়মি-আঁচ টের পান দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই পুরুলিয়ার জেলা নেতাদের তিনি কুড়মিদের ক্ষোভের মোকাবিলায় মাঠে নামতে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে দলের এক শীর্ষ নেতা ও এক বিধায়ক কেন এতদিন হাত গুটিয়ে তাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁদের কাছে অভিষেক তা জানতে চান। তাঁদের বৈঠক ডেকে মাঠে নামতে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে বৈঠকে বসেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো, জেলা কমিটির চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো, জেলা পরিষদের দলনেতা হলধর মাহাতো, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল খেত মজদুর সমিতির জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ মাহাতো। ডাকা হয় জেলা কমিটি ও ব্লক সভাপতি পদে থাকা কুড়মি সম্প্রদায়ের নেতা-নেত্রীদের। বৈঠকে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া ও জেলার বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
দল সূত্রের খবর, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কুড়মিদের দাবির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকার যা যা পদক্ষেপ করেছেন তা কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে তুলে ধরা হবে। ২০১৭ সালের মে মাসে এই দাবির সমর্থনে রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়। শান্তিরামের দাবি, ‘‘সেই প্রস্তাব কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট-সহ পাঠানো হয়েছিল। ১৭ মে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত যা যা পদক্ষেপ করেছেন, আমাদের তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।’’
যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে: কুড়মিদের দাবির সমর্থনে রাজ্য চারবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে, কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতি এবং কুড়মি উন্নয়ন বোর্ড গড়া এই রাজ্য সরকারই করেছে। কুড়মি সম্প্রদায়ের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নামে মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়েছে। কুড়মি সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাল্টা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের আপত্তিকর মন্তব্যের কথা তুলে ধরা হবে। ঠিক হয়েছে, গ্রামে গ্রামে ছোট বৈঠকে, চায়ের দোকানের আড্ডায় বা মোড়ের জটলায় এই কথা বলা হবে।
দলের এক নেতা বলেন, ‘‘অনেকে জানেন না কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআরআই) কী। ঠিক মতো প্রচারের অভাবে অনেকেই ভাবছেন রাজ্য সরকার কিছুই করেনি। কিন্তু বিষয়টি যে তা নয়, সেটাই তুলে ধরতে হবে।’’ বৈঠকে হাজির আর এক নেতার কথায়, ‘‘সিআরআই রিপোর্টে ঠিক কী রয়েছে সেটা আমাদের ভাল করে জানতে হবে ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনকে জানাতে হবে।’’
দলের জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘এই যে বলা হচ্ছে দেওয়ালে ভোট-প্রচার করা যাবে না, তৃণমূলকে ভোট দেওয়া হবে না। কিন্তু ভোটাধিকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। কোনও ব্যক্তি তাঁর দেওয়ালে ভোট প্রচারে আপত্তি জানাতে পারেন। কিন্তু কোনও সামাজিক সংগঠন কি এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে?’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার তো এই দাবির সমর্থনে একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শালবনির সভা থেকেও ফের তা বলেছেন। কিন্তু কেন্দ্রই নানা অজুহাতে তা ফেরত পাঠাচ্ছে। কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে সেটাও আমরা বলব।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার পাল্টা দাবি, ‘‘কেন্দ্র রাজ্যের কাছে যা চাইছে, তা রাজ্য দিতে পারছে না। নিশ্চয় রাজ্য সরকারের ঘাটতি রয়েছে। কুড়মি ভাইয়েরা তা জানেন বলেই আন্দোলনে নেমেছেন।’’
আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘কেন্দ্র সুনির্দিষ্ট ভাবে যা চেয়েছে, সেটা কি রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে? কী পাঠানো হবে, রাজ্য তা নিয়ে আলোচনা করলেও, হঠাৎ করে সেখান েকন সরে গেল, তা স্পষ্ট নয়। কুড়মি নেতাদের বলছি, যে দলেরই হন, মানুষকে বোঝানোর আগে নিজেরা বিষয়টি ভাল করে বুঝে নিন। ’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy