শুক্রবারের মল্লারপুর। (১) থানায় গাড়ি আটকানোর চেষ্টা, (২) আগুন জ্বালিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ।
ব্যবধান চার বছরের। আরও এক বার পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে ঘিরে অশান্ত বীরভূম।
২০১৬ সালে বোলপুর থানার লক-আপে এক যুবকের মৃত্যুর পরে এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। রাজু থান্দার নামে সেই যুবককে চোর সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার রাতে মল্লারপুর থানায় যে নাবালকের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাকেও চোর সন্দেহেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব এবং মৃতের প্রতিবেশীরা।
বোলপুরের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি বা এপিডিআর। চলতি বছর জুলাইয়েও অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের শাস্তির দাবিতে সংগঠনের সদস্যেরা বিক্ষোভ দেখান বোলপুরে। মল্লারপুরের ঘটনা নিয়েও তাঁরা লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের জেলা শাখা সম্পাদক শৈলেন মিশ্র। তিনি শুক্রবার বলেন, ‘‘হেফাজতে মৃত্যু সভ্য সমাজে এক ঘৃণ্যতম অপরাধ। পুলিশে কোনও ভাবেই এর দায় অস্বীকার করতে পারে না। এপিডিআর তীব্র ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে। তদন্তসাপেক্ষে দোষী পুলিশ আধিকারিকের শাস্তি এবং নিহত নাবালকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে এপিডিআর লড়বে।’’
সূত্রের খবর, আজ শনিবার ঘটনার তদন্তে বীরভূমে আসছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন। জেলা প্রশাসনের তরফেও শনিবার মল্লারপুরে একটি বিশেষ দল পাঠানো হবে তদন্তের জন্য।
তবে, কী ভাবে মারা গেল মল্লারপুরের রেলপাড় খালাসিপাড়ার বাসিন্দা ওই নাবালক, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। প্রশ্নও উঠছে নানা। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পুলিশের অত্যাচারে মারা গিয়েছে ওই নাবালক। পুলিশ সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি, মৃতের বাবা ও মা-ও দাবি করেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই।
(৩) তেড়ে গেল পুলিশ, (৪) আটক করা হল আন্দোলনকারীদের। ছবি: সব্যসাচী
স্থানীয় সূত্রের খবর, পুজোর সময় এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনায় ওই নাবালককে পুলিশ আটক করেছিল। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইল উদ্ধার করে। তিন দিন আগে অন্য একটি চুরির ঘটনায় এলাকা থেকে ৯ জনকে পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে ওই নাবালকও ছিল। মৃতের প্রতিবেশী মঞ্জু বাউড়ি এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমরা এলাকার মহিলারা কয়েক জনকে ছাড়ানোর জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে মল্লারপুর থানায় যাই। তখন পুলিশ আমাদের সামনে ওই ছেলেটিকে যথেষ্ট মারধর করে।’’
স্থানীয় সূত্রেই জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ পুলিশ ওই নাবালকের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে মৃত্যুর খবর দেয়। তারা বাবা-মাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে শুক্রবার বিকেলে তারাপীঠ শ্মশানে ওই নাবালকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কার্যত পুলিশের ‘হেফাজতেই’ ছিলেন মৃতের বাবা-মা। শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন মল্লারপুরের বাসিন্দা এবং ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায়। তাঁর দাবি, ‘‘ওই ছেলেটির ড্রাগের নেশা ছিল। এলাকায় অনেক চুরির ঘটনায় যুক্ত ছিল।’’ এমনকি, ছেলেটির বাবা তাঁদের দলের সমর্থক বলেও দাবি বিধায়কের।
ঘটনাচক্রে তারাপীঠ শ্মশানে দাঁড়িয়ে মৃতের বাবাও এ দিন বলেন, ‘‘আমার ছেলে মাদকের নেশা করত। এর জন্য অনেক খারাপ কাজ করত। পুলিশ ছেলেকে এলাকার একটি চুরির ঘটনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। গভীর রাতে পুলিশ খবর দেয় ছেলে থানায় আত্মহত্যা করেছে। আমরা পুলিশের কথায় বিশ্বাস করছি।’’ বিজেপি-র জেলা সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ও তৃণমূলের চাপে মৃতের বাবা-মা ওই কথা বলছেন। তবে, পুলিশের অত্যাচারেই ওই ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। তাই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা লড়াই চালাব।’’
সব মিলিয়ে মল্লারপুরের পরিস্থিতি যথেষ্টই তেতে রয়েছে। অশান্তি রুখতে টহল দিচ্ছে বড় পুলিশ বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy