মধ্যমণি: পড়ুয়াদের সঙ্গে অর্থনীতিবিদ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো
পুরুলিয়ায় এলে ফিরে পান আশার আলো। মনে হয়, সমস্যা থাকলেও ঠিকই চলছে সব কিছু। সেই টানেই তাঁর বারবার পুরুলিয়ায় আসা। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডুঁড়কু শ্রী অরবিন্দ বিদ্যাপীঠে এসে এমনই মন্তব্য করলেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসু।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই নানা সমস্যা। যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে। অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অনেক মাথাব্যথা। মাঝে মধ্যে আশা হারিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু পুরুলিয়াতে এলেই আবার আশাটা ফিরে আসে।”
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ডুঁড়কুর স্কুলে পৌঁছন কৌশিক। অনেক আগে থেকেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক শুভাশিস গুহনিয়োগী কৌশিক বসুকে ঘুরিয়ে দেখান স্কুলের মধ্যে তৈরি করা পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি ‘গরাম থান’-এর ‘রেপ্লিকা’। অর্থনীতিবিদ কৌতূহল প্রকাশ করলে তাঁকে জানানো হয়, গ্রাম্য জীবনে গরাম থান তৈরির ইতিবৃত্তের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পরেই এই স্কুলে শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহায়তায় বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যাসাগরের সেই মূর্তি দেখানোর সময় মূর্তি ভাঙার ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে আসে। পরে বিবেকানন্দের মূর্তিতে ফুল দিয়ে সম্মান জানান কৌশিক। তাঁকে দেখানো হয়, ট্রেনের কামরার আদলে তৈরি স্কুলের শৌচালয়। পরে সেই শৌচালয় তৈরির ভাবনার প্রশংসা করে কৌশিক বলেন, ‘‘প্রথমে বুঝতেই পারিনি ওটা শৌচালয়। ভেবেছিলাম একটা সুন্দর ট্রেনের কামরা!”
এ দিন স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ। কাউকে আদর করে কাছে টেনে নাম জেনেছেন, কারও মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চেয়েছেন কোন শ্রেণিতে পড়ে। দেশের প্রাক্তন মুখ্য জাতীয় অর্থনেতিক উপদেষ্টাকে সহজ সরল ভাবে মিশতে দেখে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকেরাও। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলের পথচলার অধ্যায়ে নতুন ইতিহাস এ দিন তৈরি হল।”
বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৌশিক পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘তোমরা বড় হবে, কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। কিন্তু সব সময় এই ভাবনাটা রাখবে— নিজের উন্নতির চাইতেও একটা বড় উন্নতি হচ্ছে দেশের উন্নতি, পৃথিবীর উন্নতি। যেখানে মানুষ সমস্যায় পড়েছে দেখবে, তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।” পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘‘পৃথিবী অনেক বদলে যাচ্ছে। আগে থেকে বলা যাবে না, ঠিক কী শিখতে হবে তোমাদের। কিন্তু শেখার ক্ষমতাটা আয়ত্ত করে ফেলতে হবে। যাতে পৃথিবী বদলে গেলেও তার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পার।”
নিজের কর্মজগতের অভিজ্ঞতার কথা তুলে পড়ুয়াদের মনে করিয়ে দেন, একটা প্রেরণা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। পড়ুয়াদের উৎসাহ দিতে দেশের জাতীয় মুখ্য অর্থিক উপদেষ্টা হওয়ার ঘটনার কথা তুলে ধরেন। কৌশিক জানান, ২০০৯ সালের ৭ অগস্ট আমেরিকা থেকে দিল্লিতে ফিরেছেন। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এক মহিলা ফোন করে তাঁকে জানান, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চাইছেন তিনি যেন কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
কৌশিকের কথায়, “একেবারে চমকে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এটা আমার কাছে একটা বিরাট সুযোগ। কিন্তু তার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরের দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাকে কাজের পূর্ণ জায়গা দেব। সেরা ‘আইডিয়া’ দেশের জন্য আনতে হবে।” আর্থিক উপদেষ্টা হিসাবে অনেক কাজই করে উঠতে পারেননি জানিয়ে কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘তিন বছর কাজ করেছি। জানি অনেক কিছুই করে ওঠা যায়নি। কিন্তু একটা উপলব্ধি হয়েছে, মানুষের মধ্যে যদি প্রেরণা থাকে, ‘আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করব’, তার থেকে অনেক কিছুই করা যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy