নজরে: দেহ শনাক্ত করার নোটিস। রামকৃষ্ণপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ভাইবোন জানত— তাদের বাবা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সুস্থ হলেই বাড়ি ফিরবে।
মঙ্গলবার সকালে সেই ভুল ভাঙল দুই বোনের। দাদু-ঠাকুমা, পরিজনদের কান্না দেখে ভেঙে পড়ল তারাও। স্বরূপ গড়াইয়ের ছোট ছেলে শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে ঘুরল এদিকে ওদিকে।
নিহত বিজেপি কর্মীর পরিজনদের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের মর্গ থেকে তাঁর দেহ নিয়ে বোলপুরে চলে আসে পুলিশ। রাতে মহকুমা হাসপাতালের মর্গে ছিল স্বরূপবাবুর দেহ। এ দিন সকালে তা জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়ায় নানুরের রামকৃষ্ণপুরে গুলিতে নিহত ওই যুবকের পরিবার, পড়শিদের মধ্যে।
ক্ষুব্ধ স্বরূপবাবুর বাবা ভুবনেশ্বরবাবু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ চোরের মতো আমাদের কিছু না জানিয়ে কলকাতা থেকে মৃতদেহ নিয়ে চলে এসেছে। এখন সব ধামাচাপা দিতে দেহের সৎকার করানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এ ভাবেই ওরা হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে।’’
নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতেই স্বরূপবাবুর মৃতদেহ শনাক্ত করে বোলপুরের হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার জন্য চিঠি নিয়ে পুলিশ রামকৃষ্ণপুরে তাঁর বাড়িতে যায়। কিন্তু স্বরূপবাবুর পরিবারের তরফে সেই চিঠি নিতে অস্বীকার করা হয়। পুলিশ নিহত যুবকের বাড়ির দেওয়াল, বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের প্রতীক্ষালয়, শহিদবেদী, এলাকার কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটিতে দেহ শনাক্তকরণের নোটিস সেঁটে দেয়। নানুরের সার্কেল ইনস্পেক্টরের স্বাক্ষরিত এবং শীলমোহর দেওয়া সেই নোটিসে ভুবনেশ্বর গড়াইকে ‘সৎকারের জন্য মৃতদেহ নেওয়ার অনুরোধ’ জানানো হয়েছে। স্বরূপবাবুর বাড়ির সামনের দেওয়ালে টাঙানো নোটিস ছিঁড়ে ফেলেন পরিজন-পড়শিরা।
গত শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বরূপবাবু। রাজনৈতিক আক্রোশে তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে গুলি করে বলে অভিযোগ বিজেপির। সোমবার রাতে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্বরূপবাবুর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃতদেহ নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব স্বরূপবাবুর মৃতদেহ কলকাতায় দলের সদর দফতরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। একই কথা জানান স্বরূপবাবুর স্ত্রী চায়নাদেবীও। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ সেই অনুমতি দেয়নি। যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে ওই কথা মানা হয়নি। নীলরতন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ না নিয়েই সোমবার রাতে চলে যায় স্বরূপবাবুর পরিবার। অভিযোগ, রাতে নিহতের পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ নিয়ে বোলপুরে চলে আসে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপবাবুর দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ে বৈশাখী বাসাপাড়া-ব্রাহ্মণখণ্ড হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে অন্তরা পড়ে গ্রামের স্কুলে, তৃতীয় শ্রেণিতে। ছেলে আকাশ বাসাপাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কেজি টু-র ছাত্র। প্রতি দিন ছেলেকে সাইকেলে স্কুলে নিয়ে যেতেন স্বরূপবাবু। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে অন্তরা বলে, ‘‘এখন কে ভাইকে স্কুলে নিয়ে যাবে? কে নিয়ে যাবে আমাদের মেলা দেখাতে।’’
নাতনিদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন স্বরূপবাবুর মা রেণুকাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘কী করে ছেলেমেয়েগুলোকে মানুষ করব ভেবে পাচ্ছি না।’’
সবার কান্না দেখে আকাশের মুখে ছিল একটাই প্রশ্ন— ‘‘বাবার কবে ছুটি হবে? কখন ফিরবে বাড়িতে?’’ একরত্তি ছেলের মন ভোলাতে শুক্রবার রাত থেকে এটাই যে বাড়ির সবাই বলেছিল তাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy