উদ্ধার হওয়া বোমা তৈরির সরঞ্জাম। বেলিয়াড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
ধৃতদের এলাকায় নিয়ে গিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের দেওরের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করল পুলিশ। সোমবার সকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের বেলিয়াড়ার ঘটনা। রবিবার ভোর থেকে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর ঝামেলায় তেতে রয়েছে বেলিয়াড়া। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবুদ্দিন খান জানান, ওই দিন থেকেই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার সকালে বেলিয়াড়ার বাসিন্দা সবুর মণ্ডলের বাড়ি থেকে পাঁচ কেজি বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত সবুর মণ্ডল পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে।” এ দিকে, উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান তাসমিনা খাতুনের পাল্টা অভিযোগ, ফাঁকা বাড়িতে বোমা রেখে সবুরকে ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১ অগস্ট উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান শেখ বাবর আলিকে দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে তাড়া করে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও বোমা মেরে খুন করেছিল। সে ঘটনায় নাম জড়ায় তৃণমূলের বর্তমান প্রধান তাসমিনা খাতুনের স্বামী রহিম মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা তখন গ্রেফতার হয়ে পরে, জামিনে ছাড়া পান। সে থেকেই রহিম মণ্ডলের গোষ্ঠীর সঙ্গে বাবর আলির অনুগামীদের বিরোধ চরমে ওঠে। রহিম মণ্ডল-সহ তাঁর অনুগামীদের অনেকেই সপরিবার এলাকাছাড়া ছিলেন। পরে, ধাপে ধাপে পরিবারগুলিকে বাড়ি ফেরানো হয়। ওই পর্বে তাসমিনা ফিরে এলেও রহিম অবশ্য ফেরেননি।
রবিবার ভোর থেকে দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছিল বেলিয়াড়া। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু তাজা বোমা উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় সাত অভিযুক্তকে। তারা এলাকায় রহিম মণ্ডলের গোষ্ঠীর লোকজন বলেই পরিচিত। প্রত্যেকেই বাবর আলি খুনের পরে দীর্ঘ দিন বাড়িছাড়া ছিলেন। গ্রেফতার পরে, রবিবারই সাত জনকে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। দুই অভিযুক্ত আলি মণ্ডল ও শেখ বদরু আলমের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর হয়। ধৃত এক জন করোনা সংক্রমিত হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় বিষ্ণুপুর হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে। বাকি চার জনের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আলি মণ্ডল ও শেখ বদরু আলমকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। সোমবার সকালে দু’জনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিল। তাদের কথা মতো স্থানীয় সবুর মণ্ডলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম।
এ দিকে, সবুর মণ্ডল বাবর আলি খুনে অন্যতম অভিযুক্ত রহিম মণ্ডলের ভাই। রহিমের স্ত্রী তথা উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বর্তমান প্রধান তাসমিনা খাতুন এ দিন ফোনে অভিযোগ করেন, “সোমবার বেলিয়াড়ার আমাদের প্রায় ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। আমার আত্মীয় সবুর মণ্ডলের বাড়িতে কেউই ছিল না। ফাঁকা বাড়িতে বোমা তৈরির সরঞ্জাম রেখে দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে ওরা।’’
এ দিনের ঘটনার পরে, বেলিয়াড়ার পরিস্থিতি অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাসমিনার দাবি, তিনি রবিবার ভোরেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় পুলিশ মহিলা ও নাবালকদের গ্রামে ফিরতে সাহায্য করেছিল। আজ পুলিশের সামনেই তারা ফের ঘরছাড়া হল। জানি না, কবে এলাকা শান্ত হবে।’’
এলাকায় বাবর আলির অন্যতম অনুগামী হিসাবে পরিচিত শেখ কোহিনুর সোমবার বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম ক্রমশ শান্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু রবিবার ভোরে বোমাবাজি করে এলাকা দখল করতে আসে কিছু লোকজন। তাতেই নতুন করে অশান্তি পেকেছে। তবে পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। আমরাও চাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।’’ বাড়ি ভাঙচুর ও ঘরছাড়া হওয়ার কোনও খবর তাদের কাছে নেই বলে পুলিশের দাবি। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। আইন আইনের পথেই চলবে। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে আমরা দলগত ভাবে চেষ্টা করে চলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy