পরিদর্শনে পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র
মৌতোড় গ্রামের বড়কালী পুজোয় ফি বছরে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয়। ভিড় সামলাতে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। ভিড়ে ঠাসা এলাকায় দুষ্কর্মেরও অভিযোগ ওঠে। এ সব মাথায় রেখে এ বছরে পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও আইন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
সোমবার বিকেলে মৌতোড় গ্রাম ঘুরে এমনই কথা জানান পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া। তিনি বলেন, ‘‘কালীপুজোয় জেলার মধ্যে মৌতোড় গ্রামে সব চেয়ে বেশি ভিড় হয়। তাই আমরা পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিড় নিয়ন্ত্রণ-সহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছি।’’ এ দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন, এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুর থানার আইসি সন্দীপ চট্টরাজ।
স্থানীয় মতে, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় গ্রামের বড়কালী পুজো প্রায় তিনশো শতাধিক বছরেরও বেশি পুরনো। এলাকার বাসিন্দা তথা লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন, ‘‘মৌতোড় গ্রামের কালীপুজো ঠিক কখন শুরু হয়েছিল, সেই বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য-প্রমাণ নেই। কিন্তু এই পুজোর বয়স তিনশো পেরিয়েছে। পুজো শুরু করেছিলেন সাধক শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
ঐতিহ্য আর ভক্তির মিশেলে এই কালীপুজোর ভিড় সামলানো বরাবরই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ ও পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছে। পুজো উপলক্ষে মেলাও বসে, যা পরিচালনা করে গ্রামের তরুণ সঙ্ঘ। এ বারে সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে মেটাতে আগেভাগেই পুজোর উদ্যোক্তা ও মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হচ্ছে পুলিশ।
কী কী ব্যবস্থা থাকছে? সূত্রের খবর, এ বারই প্রথম মন্দির প্রাঙ্গণ ও মেলা চত্বর আনা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। মন্দির লাগোয়া এলাকায় থাকবে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। তৈরি হবে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র। কন্ট্রোল রুমে বসে পুলিশকর্মীরা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালাবেন।
মন্দির এলাকায় দমকলের একটি ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় কোনও গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে তৎক্ষণাৎ সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ‘রিকভারি ভ্যান’। গাড়ি ও মোটরবাইক, সাইকেল রাখার জন্য নতুন আর একটি পার্কিং জোনও তৈরি করা হচ্ছে।
পুজোর সময়ে রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রাস্তাও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেই কথা মাথায় রেখে রাস্তা-সহ পার্কিং জোনে পুলিশের ‘পুশআপ’ বাহিনী থাকছে, যাঁরা অযথা ভিড় করে রাখা লোকজনদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা ও অন্য এলাকা ভিড়মুক্ত রাখবেন। এ ছাড়াও, মৌতোড় গ্রামের দু’প্রান্তে তৈরি করা হচ্ছে ‘ড্রপ গেট’। ভিড় বেশি হলে সেই গেট বন্ধ করে লোকজনদের মন্দির ও মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোয় ভিড় সামলানো-সহ আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার-সহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের অন্যতম সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্য সমস্যা আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করছে পুলিশ। আমরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।” সিসি ক্যামেরা থাকলে মেলায় ছোটখাটো চুরি-সহ অন্য অপরাধ দমনেও সুবিধা হবেই বলে মনে করেছেন মেলা পরিচালন কমিটির কর্মকর্তা উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy