মৃণ্ময়ী: নেই দেবীর হাতের অস্ত্র। গয়নাও নামমাত্র। ছবি: শুভ্র মিত্র
ঝোলা কাঁধে মন্দির থেকে দুই দুষ্কৃতীকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলেন সিভিক কর্মীরা। তাদের পিছু নিয়েও নাগাল পাওয়া যায়নি। তার পরে দু’মাস পেরিয়ে গেলেও বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির কুলদেবী মৃণ্ময়ীর চুরি যাওয়া সমস্ত গয়না উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সপ্তাহ দু’য়েক পরেই জিতাষ্টমীতে শুরু হবে মৃন্ময়ীর ‘বিল্ববরণ’। এ বার কি তবে অলঙ্কার ছাড়াই দেবীর পুজো হবে? এই প্রশ্ন তুলে পুলিশের তদন্তের গতি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিষ্ণুপুরবাসীর একাংশ।
২ জুলাই রাতে মন্দিরের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিগ্রহের গা থেকে সোনা ও রুপোর গয়না খুলে নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সিভিক কর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতেই রাজবাড়ির সদস্যেরা ঘুম ভেঙে ছুটে গিয়েছিলেন মন্দিরে। পরের দিন সেখানে ভেঙে পড়েছিল বিষ্ণুপুর। গয়না উদ্ধারের দাবিতে পথে নামেন শহরের কিছু মানুষ। তদন্তে নামে পুলিশ। দিন গড়িয়ে গেলেও গয়না ফেরেনি মন্দিরে।
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, ‘‘সন্দেহভাজনদের আটক করে দফায় দফায় জেরা করেছি। ওন্দার পুনিশোল থেকে থেকে এক জনকে ধরে জেরায় বিগ্রহের কিছু গয়নাও উদ্ধার হয়। বাকি অভিযুক্তেরা ভিন্ জেলায় গা-ঢাকা দিয়েছে। সেই সব জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’’
যে পরিমাণ গয়না উদ্ধার করা হয়েছে, তা কি পুজোর আগে পাওয়া যাবে? এখানেই চাপান-উতোর শুরু হয়েছে পুলিশ ও রাজবাড়ির সদস্যদের মধ্যে। বিষ্ণুপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘চুরি যাওয়া গয়নার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দেবীর কী-কী গয়না রয়েছে, তা রাজবাড়ির সদস্যেরা আগে থানায় জানাননি। এখন তাঁরা চুরি যাওয়া গয়নার যে তালিকা দিয়েছেন, তা বেশ দীর্ঘ। কিন্তু স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বারো মাস বিগ্রহে অল্প গয়না থাকত। পুজোর সময় বাকি সব গয়না পরানো হত। তা হলে চুরির আগে এত গয়না বিগ্রহকে কেন পরানো হল? সংশয় সেখানেই।’’
রাজ পরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘বিগ্রহের গায়ে সব সময় বেশি গয়নাই পরানো থাকত। সেগুলোই চলে গিয়েছে। বাড়িতে অল্প কিছু পড়ে রয়েছে। সেক’টাই পুজোর সময় পরানো হবে।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘মায়ের চুরি যাওয়া গয়না এখনও পুলিশ কিছু উদ্ধার করতে পারল না। তাতে আমরা অনুতপ্ত। বিষ্ণুপুরবাসীর ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। পুলিশের আরও তৎপরতা দরকার।’’
বিষয়টি যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা মানছেন বিষ্ণুপুরের পুরাতত্ত্ব গবেষক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। তিনি জানান, সমগ্র মল্লভূমের অধিষ্ঠাত্রীদেবী মৃণ্ময়ী। ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। দশম শতাব্দীর শেষ ভাগে ঘন অরণ্যে ঢাকা বনবিষ্ণুপুরে শিকারে আসেন মল্লরাজ জগতমল্ল। কথিত রয়েছে, দেবীর নির্দেশিত জায়গায় কুশের ঘাস আর গঙ্গা মাটি দিয়ে বিগ্রহ তৈরি হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের মাহাত্ম্যপূর্ণ মন্দিরে চুরি হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা বিষ্ণুপুরের লজ্জা ছাড়া আর কী হতে পারে?’’
শুধু মৃণ্ময়ী মন্দিরই নয়, এই শহরে ছড়িয়ে রয়েছে মল্লরাজাদের তৈরি অনেক প্রাচীন মন্দির। যার ভিতরে রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্বময় বেশ কিছু বিগ্রহ। সে সবের নিরাপত্তার কী হাল? সেখানেও যদি দুষ্কৃতীদের নজর পড়ে, কী হবে? আশঙ্কার কাঁটা নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য নিয়ে ভাবিত মানুষজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy