(বাঁ দিকে) বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের ভবন। অভিযুক্তকে ঘিরে কর্তৃপক্ষের লোকজন এবং আবাসিকেরা (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
মেন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে একাধিক বার নিরাপত্তারক্ষীর বাধার মুখে পড়েছিলেন। তাই পাঁচিল টপকে শুক্র সন্ধ্যায় মেয়েদের হস্টেলে ঢুকে পড়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত গড়াই। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেমনটাই মনে করছেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারির পর শনিবার লক্ষ্মীকান্তকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে হাজির করায় পুলিশ। যুবককে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু কেন মরিয়া হয়ে লক্ষ্মীকান্ত মেয়েদের হস্টেলে ঢুকেছিলেন, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যোগাযোগ করা হয়েছে ধৃতের পরিবারের সঙ্গেও।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তারক্ষীর নজর এড়িয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের ‘ওল্ড বিল্ডিং’-এর দোতলায় উঠে পড়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। দোতলার একটি শৌচালয়ে তাঁকে ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ দেখতে পান বলে দাবি করেছেন এক আবাসিক। ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শৌচালয় থেকেই যুবককে গ্রেফতার করে। ধৃতের কাছে একটি ব্যাগ ছিল। সেখান থেকে তাঁর আধার কার্ড পায় পুলিশ। সেটি দেখে অভিযুক্তের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। জানা যায়, লক্ষ্মীকান্তের বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার ডুমুরিয়া গ্রামে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে যুবকের অসংলগ্ন কথাবার্তায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে যুবকের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিও খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কেন এবং কী ভাবে তিনি মেডিক্যাল কলেজের লেডিজ় হস্টেলে ঢুকতে গেলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুন্ডু বলেন, ‘‘হস্টেলের মেন গেটে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ তন্ন তন্ন করে খতিয়ে দেখেও যুবককে চোখে পড়েনি। পরে হস্টেলের ‘ওল্ড বিল্ডিং’-এর দিকে তাগ করা একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, হস্টেল চত্বরে প্রবেশ করছেন তিনি। হস্টেলের পাশে পাঁচিলের একাংশ কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। সেটা পুরনো হয়ে গিয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে, সেখান দিয়ে যুবক হস্টেলে প্রবেশ করেন।’’ অধ্যক্ষ জানান, অবিলম্বে পাঁচিলের ওই অংশে নতুন কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হস্টেল চত্বরে নিরাপত্তার জন্য এ বার থেকে এক জনের বদলে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে। পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধিরও আবেদন জানানো হয়েছে।
লক্ষ্মীকান্তকে আটক করার পর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের তরফে বাঁকুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় যুবককে। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং পড়ুয়া চিকিৎসকদের তরফেও পৃথক ভাবে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। সেখানে মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলাতির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেসিডেন্ট চিকিৎসক বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ় হস্টেলে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, লেডিজ হস্টেলেও ন্যূনতম নিরাপত্তা মিলছে না! যত বার আমরা নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলি, তত বারই শুধু আশ্বাস মেলে। ওই পর্যন্তই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভয়ঙ্কর কোনও ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের হয়তো ঘুম ভাঙবে না।’’
অন্য দিকে, গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের লেডিজ় হস্টেলের সামনে পুলিশ পিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশ নিয়মিত হস্টেলের বাইরে টহলও দেয়। হস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খতিয়ে দেখে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy