জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে ঝালদার সাপাই সেতুর একটি স্তম্ভ | ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়েছে পুরুলিয়ার অনেক জায়গায়। ঝালদা ১ ব্লকের ঝালদা-গোলা রাস্তায় সাপাই নদীর সেতুর একটি স্তম্ভ ভেঙে পড়ে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জেলার অনেক এলাকা। প্রশাসনের দাবি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাঁকুড়ায় জনজীবনে বৃষ্টির প্রভাব তেমন না পড়লেও একাধিক কালভার্ট জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, শনিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ১১৪.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জেলাশাসক রজত নন্দা জানান, বিভিন্ন ব্লকে বিপজ্জনক মাটির বাড়ির বাসিন্দাদের নিকটবর্তী স্কুলে স্থানান্তর করা হচ্ছে। শিবিরে থাকা মানুষজনের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। শনিবারের রাতভর বৃষ্টিতে পুরুলিয়া শহরের শ্রীপল্লি, সূর্যসেন পল্লি, পাঠমন্দির সংলগ্ন এলাকা, নিমটাঁড় বহাল বস্তি, রামকৃষ্ণ পল্লি বিবেকাননন্দ পল্লি, কেতিকা, নিউকলোনি জলমগ্ন হয়। অনেক বাড়িতে জল ঢুকে যায়। বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দাদের দাবি, যে সব এলাকা দিয়ে বৃষ্টির জল বেরিয়ে যেত, সেখানে বাড়ি তৈরি হওয়ায় রাস্তা নদীর চেহারা নিয়েছে। রামকৃষ্ণ পল্লির সুজিত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বসতি বৃদ্ধির নিরিখে যেমন নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি।’’ সূর্যসেন পল্লির রাস্তাতেও জল জমে। বাসিন্দাদের দাবি, ভারী বৃষ্টি হলেই এলাকা ডুবে যায়। আগে বৃষ্টির জল সাহেব বাঁধে মিশত। এখন সাহেব বাঁধে জল ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্ত কী ভাবে জল বেরোবে, তার পরিকল্পনা করা হয়নি। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘এত বৃষ্টি হলে কিছু এলাকায় জল জমবেই। সূর্যসেন পল্লির মতো নিচু এলাকায় জমা জল সরাতে সকালেই পাম্প চালানো হয়েছে। দুপুরে প্রায় সমস্ত জায়গা থেকেই জল নেমে গিয়েছে।’’
রঘুনাথপুর, ঝালদা শহর ও রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বাগতবাড়িতে কয়েকটি কাঁচা বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। পাড়া ব্লকের আনাড়া কলোনির কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়। জাহাজপুর কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র সূত্রে খবর, আগামী দু’য়েকদিন বৃষ্টি হতে পারে।
ঝালদা ১ ব্লকে ১১৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদা থেকে ঝাড়খণ্ডগামী গোলা রাস্তায় সাপাই নদীর সেতুর একটি স্তম্ভ জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে। খবর পেয়েই সেতুর রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সেতু দিয়ে পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীর জল নামলে পাশ দিয়ে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হবে।’’ টানা বৃষ্টিতে প্রায় সমস্ত নদী ও জোড়ে জল বাড়ায় জেলার একাধিক রাস্তার কজ়ওয়ে জলের তলায় চলে যায়।
পুরুলিয়া ১ ব্লকে কংসাবতী নদীর কাঁটাবেড়া ঘাটের সঙ্গে আড়শার বামুনডিহা গ্রাম লাগোয়া ঘাটের সংযোগকারী দু’টি সাঁকোই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। বামুনডিহা গ্রামের বাসিন্দা দেবীলাল মাহাতো বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে ভারী বৃষ্টিতে সাঁকো ভেঙে পড়ায় দু’টি সাঁকো গড়া হয়েছিল। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে দুটি-ই ভেসে গিয়েছে।’’
টামনা-আড়শা রাস্তায় একটি জোড়ের কজ়ওয়ে জলের তলায় চলে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। ঝালদা ১ ব্লকের শলদহ নদীর উপরে কজ়ওয়েও জলের তলায় চলে যায়। সকালে জলের তোড়ে ভেসে যান এক চাষি। কোনওরকমে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন তিনি। তবে তাঁর আনাজের ঝুড়ি ও সাইকেল ভেসে গিয়েছে। বাঘমুণ্ডি ব্লকের সুইসা-শালডোবরা রাস্তার একটি কজ়ওয়ে এবং ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদর-ঝালদা রাস্তার উপরে সাহারজোড় কজ়ওয়ে ডুবে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। বাঁকুড়ায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে এ দিন সকাল জেলার গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৫১ মিমি। তবে জনজীবনে প্রভাব তেমন পড়েনি। সিমলাপালে শিলাবতী নদীর উপরে ভেলাইডিহা থেকে হাড়মাসড়া যাওয়ার রাস্তায় কালভার্ট জলমগ্ন হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রানিবাঁধের আকখুঁটা মোড় থেকে অম্বিকানগর যাওয়ার রাস্তায় আকখুঁটা কালর্ভাট জলমগ্ন থাকায় যাতায়াত বন্ধ ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy