ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। কিন্তু, কনকনে শীতকে হার মানিয়ে দিল লাখো মানুষের ভিড়। সোমবার মকর স্নান ঘিরে ইলামবাজারের জয়দেব-কেঁদুলিতে ঢল নামল পুণ্যার্থীদের। অজয়ে পুণ্যস্নানের পরে বিখ্যাত রাধান-বিনোদ মন্দিরেও পুজো দেওয়ার দীর্ঘ লাইন পড়ল মানুষজনের। হাড় কাঁপানো ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই।
জয়দেব-কেঁদুলির মেলার এখানেই মাহাত্ম্য। এই মেলা এই কারণেই মানুষের মেলা বলে পরিচিত। রবিবার দুপুরের পর থেকে দূর-দূরান্তের পুণ্যার্থীরা অজয় নদের চরে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন। সোমবার মকর স্নান করতে পুণ্যার্থীদের ভিড়ে ঠাসা ছিল অজয়ের ঘাট গুলি। জয়দেব মেলার অন্যতম মূল আকর্ষণ বাউল-ফকিরের গান। রবিবার থেকে আখড়ায় আখড়ায় বাউল ফকিরের গান, সাধু সান্তদের কোলাহলে জমে উঠেছে মেলা। অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে চেনা ছন্দে মেলা ফিরে আসায় খুশি মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা। ভাল লাভের আশায় রয়েছেন তাঁরা।
বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি এ বারও মেলার একটি বড় অংশ জুড়ে একাধিক আখড়া বসানো হয়েছে। সাড়ে ছশোর বেশি স্টল ও ২৫০-৩০০টি আখরা বসেছে। রবিবার রাত থেকেই আখড়াগুলিতে বাউল, কীর্তন গানের আসরে ভিড় জমিয়েছেন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থী। বহরমপুর থেকে আসা চুমকি মণ্ডল সরকার, নদিয়ার গীতশ্রী পাল, হুগলির তৃষা কুণ্ডুরা বলেন, “প্রতি বছর মকর স্নান করতে গঙ্গাসাগর কিংবা জয়দেবে এসে থাকি। করোনার সময় থেকে তা আর হয়ে ওঠেনি। এই বছর জয়দেব মেলায় আসতে পেরে এবং পুণ্যস্নান করে সত্যিই ভাল লাগছে।”
মকর স্নান ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তার জন্য জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ঘাটগুলিতে ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্টের টিম থেকে শুরু করে লাইফ বোট নামিয়ে নজরদারি চালানো হয় এ দিন। অজয় নদের বিপদসঙ্কুল স্থানগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। তবে, অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের। মহকুমাশাসক (বোলপুর) তথা মেলা কমিটির সম্পাদক অয়ন নাথ বলেন, “বহু মানুষ আবেগের টানে এই মেলায় এসে থাকেন। এ বছরও পুণ্যস্নান করতে ও মেলা দেখতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে। সকলের সহযোগিতায় পুণ্যস্নান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা গিয়েছে। আশা করছি মেলার বাকি দিনগুলিও সুষ্ঠু ভাবে কাটবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)