Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Rajnagar Bhabani Puja

বয়স কেবলই সংখ্যা, নব্বই পেরিয়েও ভবানী পুজোয় গতি নেই তারাগতি ছাড়া

রাজনগরের ভবানীপুর গ্রামে দেখা মিলল ওই পুরোহিতের। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের ভবানীপুরে বংশ পরম্পরায় মা দুর্গা ভবানীরূপে পুজিত হয়ে আসছেন।

নবতিপর পুরোহিত তারাগতি চক্রবর্তী। রাজনগরের মা ভবানী মন্দিরে।

নবতিপর পুরোহিত তারাগতি চক্রবর্তী। রাজনগরের মা ভবানী মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
রাজনগর শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:২৬
Share: Save:

শরীরে তেমন জোর নেই। দৃষ্টিও আর আগের মতো নেই। কিন্তু তাই বলে কি কাজে ইতি টানতে হবে? নবতিপর তারাগতি চক্রবর্তী অন্তত তা বিশ্বাস করেন না। আর করেন না বলেই, এখনও দুর্গার আর এক রূপ ভবানীর নিত্যসেবা থেকে শুরু করে পুজো, সব দায়িত্ব সামলান শতবর্ষ ছুঁই ছুঁই ওই বৃদ্ধ।

রাজনগরের ভবানীপুর গ্রামে দেখা মিলল ওই পুরোহিতের। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের ভবানীপুরে বংশ পরম্পরায় মা দুর্গা ভবানীরূপে পুজিত হয়ে আসছেন। বৈদ্য পুজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ইতিহাস। দেবীর নাম অনুসারেই গ্রামের নাম। তারাগতি চক্রবর্তী শতাব্দী প্রাচীন ওই পুজোর সঙ্গে জুড়ে আছেন প্রায় আট দশক। বললেন, ‘‘সেই ১৯ বছর বয়স থেকে পুজো করছি। যত দিন শরীর দেবে মায়ের পুজো করব।’’

তারাগতির ছেলে লোচন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাবা পোস্ট মাস্টারের কাজ করতেন। ১৯৮৩ সালে অবসর নিয়েছেন। এখনও কোনও পুজো করার ক্ষেত্রে কোনও বইয়ের সাহায্য লাগে না মন্ত্র উচ্চারণে। শরীর দুর্বল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, মা ভবানীর পুজোর দায়িত্ব থেকে বাবা সরতে চাননি।’’

বৈদ্যদের পারিবারিক ইতিহাস বলছে, মা ভবানীর সোনার মূর্তিটি (যদিও সোনার আসল মূর্তি চুরি হয়ে যাওয়ার তার জায়গায় অষ্টধাতুর মূর্তি বানানো হয়েছে) এসেছে রাজনগরের রাজাদের পরিবার থেকে। ওড়িশার মালঞ্চনগর থেকে পূর্বপুরুষ তথা প্রসিদ্ধ বৈদ্য ভবানীশঙ্কর কবিরাজ আনুমানিক ১৫৯১ সালে এসেছিলেন রাজনগরে। তৎকালীন রাজনগরের এক মুসলিম রাজা জোনেদ খাঁয়ের চিকিৎসার জন্য। তাঁকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল হাতির পিঠে চাপিয়ে। তাঁর চিকিৎসায় রাজা সুস্থ হয়ে উঠলে সাম্মানিক বাবদ তাঁর কাছ থেকে সোনার ভবানী মূর্তি চেয়ে নিয়ে ছিলেন ভবানীশঙ্কর। যেটা রানির কুলঙ্গিতে রাখা ছিল।

যদিও কী ভাবে এক মুসলিম রাজ পরিবারে মা ভবানীর মূর্তি রাখা ছিল, সে কাহিনি অজানা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর পরে বর্গি হামলা সহ নানা অভিঘাত সামলে ১৭৪৫ সালে ভবানীপুর গ্রামে সরে আসে পুজো। গ্রামের নামও হয় ভবনীপুর। সেই থেকে পুজোর একই রীতি বহন করে চলেছেন বর্তমানে কমবেশি ২৫ ঘর সেবায়েত। আর পুরোহিত হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে রয়েছেন তারাগতি।

পুজোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বৈদ্য পরিবারের শরিকদের মধ্যে হরিসত্য সেনগুপ্ত, অতনু সেনগুপ্ত, নয়ন সেনগুপ্ত, অহীন্দ্র দাশগুপ্তেরা বললেন, ‘‘ওঁর পুজো করা দেখা যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁরা জানান, দুর্গাপুজোর রীতি মেনেই মা ভবানীর পুজো হয়ে থাকে। তবে, সবচেয়ে বেশি ধুম হয় নবমীর দিন। সেদিন মূর্তি শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির থেকে কিছুটা দুরে পীঠে (বেদিতে) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চলে পুজো। সন্ধ্যায় আবার দেবী ভবানীকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। আট দশক ধরে এই সবটাই পুরোহিত তারাগতি সামলে চলেছেন।

ওই পরিবারের সদস্য, পেশায় শিক্ষক সৈকত সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘বয়সটা কেবল একটা সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়, তা ষষ্ঠী কাকাকে (তারাগতির ডাক নাম) দেখে সত্যিই তাই মনে হয়। জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখছি, বাবার বন্ধু ষষ্ঠী কাকা পুজো করে চলেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

rajnagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE