আশায়: রঘুনাথপুরের একটি এটিএম কাউন্টারে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিলই। এ বার অধিকাংশ এটিএম-ও বন্ধ থাকায় ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে, শনিবার সঙ্কট আরও বাড়ল দুই জেলায়। মাস পয়লায় বেতন ও পেনশন তুলতে না পেরে বিপাকে পড়লেন চাকুরিজীবী ও অবসপ্রাপ্ত কর্মীরা। তাতে অসন্তোষ বেড়েছে মানুষজনের মধ্যে।
এ দিন পুরুলিয়া শহর, আদ্রা, রঘুনাথপুর, ঝালদা-সহ জেলার প্রায় সর্বত্রই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির এটিএম বন্ধ ছিল। কয়েকটি যদি বা খোলা দেখা যায়, সেখানে ঢুকে গ্রাহকেরা হতাশ হন। কারণ টাকা ছিল না বলে তাঁদের অভিযোগ। কোথাও আবার রটে যায়, শহরের কোনও একটি এটিএম থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই এটিএমে ছোটেন অনেকে। এই ভাবে সারাদিন এক এটিএম থেকে অন্য এটিএমে ঘুরেছেন লোকজন। তাতে অনেকে নোট-বন্দির ছায়া দেখছেন।
পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা কৃষি দফতরের প্রধান করণিক সুকুমার দাস, ঝালদার বাসিন্দা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান করণিক মথুরারঞ্জন কুইরীর অভিজ্ঞতা, ‘‘মাস পয়লায় বেতন তুলতে এ দিন সকালেই এটিএমে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক ধরে ঘুরেছেন বেশ কয়েকটি এটিএমে ঘুরেছি। সব বন্ধ। টাকা পাইনি।’’ আগামী সোমবার সুকুমারবাবুর এক আত্মীয়ের বিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘বিয়েতে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ভেবেছিলাম, বেতন হলেই টাকা তুলব। কিন্তু এটিএম বন্ধ থাকায় টাকা তুলতেই পারলাম না।’’
অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বর্ধিত বেতন পাওয়ার কথা সরকারি কর্মী ও শিক্ষকদের। কিন্তু ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় অনেকেই মোবাইলে বেতন আসার বার্তা পাননি। ফলে কত টাকা বেতন বাড়ল, তা নিয়ে উদ্বেগে থাকলেন কর্মীরা। ঝালদার বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘‘নতুন বেতনক্রমে কত টাকা বাড়ল, সেই বিষয়ে জানার আগ্রহ ছিলই। কিন্তু মোবাইলে বেতন আসার বার্তা পাইনি। তাই এটিএমে গিয়েছিলাম অন্তত টাকা না পাই, কত টাকা বেতন বাড়ল সেটা জানতে। কিন্তু এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ থাকায় তাও জানা গেল না।’’
মাস পয়লাতে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলেও এটিএম থেকে টাকা পাওয়া যাবে— আশায় সকাল থেকেই কয়েকটি এটিএম কাউন্টারে ঘুরছিলেন রঘুনাথপুর শহরের দুই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্গুনানন্দ গোস্বামী ও কুমুদরঞ্জন সরকার। নির্গুনানন্দবাবু আবার সম্প্রতি দক্ষিণ ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু নগদ টাকার খুবই দরকার ছিল। কিন্তু পাওয়া গেল না।” কুমুদরঞ্জনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘গোটা দিন এটিএমে ঘুরতে ঘুরতে পণ্ডশ্রম হল। টাকা পাওয়া গেল না।”
বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার পোয়াবাগানের যুবক সুবিনয় মণ্ডল। তিনি বলেন, “এলাকার একটিও এটিএমে টাকা নেই। এ দিকে হাতেও টাকা প্রায় নেই। তাই মোটরবাইকের তেল পুড়িয়ে সারা শহর চষে বেড়ালাম। একটিও এটিএমে টাকা পেলাম না।” জুনবেদিয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রাণেশ ঘোষের আক্ষেপ, “মাসের শুরুতে সংসার খরচের টাকা একলপ্তে তুলি। সেই টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মীরা গ্রাহকদের কথা ভাবলে মাসের শুরুতে এমন ধর্মঘট ডাকতেন না।” একই ছবি দেখা গিয়েছে বিষ্ণুপুর ও খাতড়া-সহ প্রায় সর্বত্র।
আজ, রবিবার ধর্মঘট উঠলেও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। সে দিন এটিএমে টাকা ভরা হবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও জেলার বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে মেলেনি। ‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক সাগর রায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের নানা নীতির জন্য কেবল ব্যাঙ্ক কর্মীরাই নন, গ্রাহকেরাও বঞ্চিত হচ্ছেন। সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবেই আমরা আন্দোলনের পথে গিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy