উত্তাল: বান্দোয়ানের পারগেলা জলাধারে পিকনিক করতে এসে তারস্বরে সাউন্ডবক্স বাজানোর অভিযোগ উঠল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন রাঢ়বঙ্গের পর্যটনস্থলগুলিকে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করছে। প্লাস্টিক এবং থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ জারি হয়েছে। বুধবার পয়লা জানুয়ারির সকালে সেই পর্যটনস্থলগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, পিকনিকে আসা অনেকেই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন সেই নির্দেশ। পয়লা জানুয়ারি রাঢ়বঙ্গের পরিচিত পিকনিক স্পটগুলিতে বনভোজনে আসা বহু মানুষকে প্লাস্টিক অথবা থার্মোকল ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। পর্যটনস্থলগুলির এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিল প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা। বেশ কিছু জায়গায় জব্দ করা যায়নি শব্দদানবকে। নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে উচ্চস্বরে ডিজে বাজিয়ে বর্ষবরণ করেছেন বহু মানুষ।
অযোধ্যা পাহাড়
থার্মোকলের ব্যবহার একদম হয়নি, এমন দাবি করা ঠিক হবে না। তবে ধারাবাহিক প্রচারের ফলে এ খানে পিকনিকে আসা লোকজনের মধ্যে থার্মোকলের ব্যবহারের প্রবণতা করেছে। তবে ঝাড়গ্রাম থেকে আসা বিমল গঙ্গোপাধ্যায় এবং নির্মল গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো পিকনিকে আসা অনেককেই থার্মোকল ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। যদিও তাদের দাবি, হাতের কাছে শালপাতা পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই থার্মোকলের থালা আনতে হয়েছে। স্বনির্ভর দলের মহিলারা পিকনিক করতে আসা লোকজনদরে স্বল্পমূল্যে শালপাতা দেবে বলে জানিয়েছিল প্রশাসন। তবে এ দিন তা দেখা যায়নি। সাউন্ড বক্স বাজলেও তীব্রতা খুব বেশি ছিল না।
গড় পঞ্চকোট
গত বছর থেকেই এখানে প্লাস্টিক ও সাউন্ড বক্সের ব্যবহার নিষিদ্ধ। বড়দিনে ভিড় কম হলেও থার্মোকল বা প্লাস্টিক ব্যবহার কার্যত হয়নি। তবে এ দিন মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে থার্মোকলের থালা ও বাটি। প্লাস্টিক রয়েছে কি না দেখার জন্য ধারা উন্নয়ন সমিতির সদস্যেরা এ দিন পাহাড়ে ঢোকার মুখেই বহু গাড়ি আটকেছিলেন। উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের দাবি, সবসময় নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি। সেই ফাঁকেই কেউ কেউ থার্মোকল নিয়ে ঢুকেছিলেন। তবে কোথাও মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজতে দেখা যায়নি।
জয়চণ্ডী
পিকনিক করতে আসা অনেকেই এ দিন থার্মোকলের থালা-গ্লাস-বাটি ব্যবহার করেছেন। পর্যটনস্থলের কাছে পুকুরের পাড়ে বেশ ভাল পরিমাণ থার্মোকলের থালা ও বাটি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। যত্রতত্র প্লাস্টিকের গ্লাস ছড়িয়ে ছিল। জয়চণ্ডীতেও সাউন্ড বক্স বেজেছে। তবে শব্দের তীব্রতা ছিল কম।
শুশুনিয়া
পর্যটনস্থলকে প্লাস্টিক এবং থার্মোকল-মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে নজরদারির জন্য বন দফতর ও শুশুনিয়া পঞ্চায়েতকে নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। তবু এ দিন পাহাড়লতিকে প্লাস্টিক এবং থার্মোকল-মুক্ত রাখা যায়নি। পিকনিকে আসা বহু লোকজনকে অবাধে থার্মোকলের থালা ও প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। বিডিও (ছাতনা) বিডিও শাশ্বতী দাস বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করা নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করব।”
মুকুটমণিপুর
কড়া নজরদারির জেরে প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার দেখা যায়নি। প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার রুখতে অভিযান চালাতে দেখা গিয়েছে পুলিশ ও বনকর্মীদের। পিকনিক করতে আসা অনেকের কাছেই প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা-গ্লাস-বাটি ছিল। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে বিনামূল্যে তাঁদের শালপাতার থালা দেওয়া হয়।
লালগড়
বিষ্ণুপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট লালগড়েও প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার রুখতে অভিযান চালায় পুলিশ ও বন দফতর। অনেকের থেকে বাজেয়াপ্ত হয় থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা। তাঁদের শালপাতার থালা দেওয়া হয়েছে। ডিজের দাপটের জেরে এই পিকনিক স্পটে কানপাতা দায় হয়ে পড়েছিল এ দিন।
মুরগুমা
পুরুলিয়ার এই এলাকায় সারাদিন তাণ্ডব করেছে শব্দদানব। নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ এবং সিভিক-কর্মী থাকলেও বনভোজনে আসা লোকজন ত্বারস্বরে সাউন্ড বক্স এবং ডিজে বাজিয়েছেন। তবে আগের তুলনায় এ বার থার্মোকলের ব্যবহার এখানে কম ছিল। যদিও অনেককেই এ দিন থার্মোকলের পাতা ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।
ঝর্নাকোচা
বরাবাজারের এই পর্যটন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে এ দিন থার্মোকলের প্লেট বাজেয়াপ্ত করেছে প্রশসান। তিনটি সাউন্ড বক্সের তারের সংযোগ খুলে দেওয়া হয়েছিল। বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কয়েকজনের হাতে থার্মোকলের প্লেট দেখে আমরা সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছি। পরিবর্ত হিসাবে ওই এলাকার বাসিন্দাদের হাতে তৈরি শালপাতার থালা তাঁরা কিনেছেন। তিনটি সাউন্ড বক্সের তারের সংযোগ খুলে দেওয়া হয়েছে।’’
ফুটিয়ারি জলাধার-কাপিষ্ঠা
সর্বত্রই এ দিন তারস্বরে বেজেছে ডিজে। নিরিবিলি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে ফুটিয়ারি জলাধারের কাছে বহু জায়গা থেকে মানুষজন পিকনিক করতে আসেন। বেশ কয়েক বছর ধরে পরিযায়ী পাখিদের দল ভিড় করে এখানে। স্থানীয় বাসিন্দারাদের অভিযোগ, ভোর থেকেই ডিজের তাণ্ডব শুরু হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy