দু'মাস ধরে বন্ধ মাইনে। শুক্রবার হাসপাতালের বাইরে কর্মবিরতি পালন করছেন চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
চুক্তি-ভিত্তিক কর্মীদের কর্মবিরতির জেরে শুক্রবার চরম ভোগান্তি হল সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের।
এ দিন সকাল থেকেই হাসপাতালে শৌচালয় পরিষ্কার হয়নি, অনেক ক্ষেত্রে শৌচালয়ে জল ছিল না। অভিযোগ, বদলানো হয়নি বিছানার নোংরা চাদর, ওয়ার্ডের মেঝেও ছিল অপরিষ্কার। যে-সব রোগীর এক্স-রে বা ইউএসজি করানোর ছিল, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ারও কেউ ছিলেন না। রোগীদের দাবি, সমস্যার কথা জানাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সদের জানালে তাঁরা বলে দিচ্ছেন, লোক না- থাকলে তাঁদের কিছুই করার নেই।
আর সিউড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে লোক নেই কারণ, সেখানে এজেন্সি মারফত নিয়োগ করা ১৫২ জন কর্মীর বেতন আটকে রয়েছে প্রায় দুই মাস ধরে। বকেয়া বেতনের দাবিতে এ দিন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন হাসপাতালের চুক্তি-ভিত্তিক ওয়ার্ড বয়, ওয়ার্ড গার্ল, হাউসকিপার ও নিরাপত্তা কর্মীরা। তার জেরেই শিকেয় উঠেছে হাসপাতালের পরিষেবা। অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ওই কর্মীরা। তাঁদের দাবি, কাজ করার জন্য তৈরি হয়েই তাঁরা এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু, বকেয়া বেতন মেটানো না-হলে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না।
হাসপাতালের কর্মী তপন চক্রবর্তী, আমরুন্নেসা খাতুনরা বলেন, “আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। আমরা বেতন পেলেই কাজ শুরু করে দেব। তা না হলে আমাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।’’
তাঁদের দাবি, বারবার নানা স্তরে আবেদন করার পরেও সুরাহা না-হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু, তার ফলে হয়রানিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ রোগীদের। এ দিন সকালে ইউএসজি করানোর কথা ছিল সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা নাজমা খাতুনের। কোনও ওয়ার্ড গার্ল না-থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ইউএসজি করাতে পারেননি তিনি। নাজমা বলেন, “এর আগেও একাধিকবার নানা কারণে হাসপাতালে আসতে হয়েছ। কিন্তু, পরিষেবার এমন দুরবস্থা কখনও দেখিনি।’’ রোগীর আত্মীয়দের কথায়, ‘‘ওঁদের দাবি অবশ্যই ন্যায্য। কিন্তু, হাসপাতালে এ ভাবে পরিষেবা বিঘ্নিত হলে প্রবল সমস্যার মুখে পড়বেন রোগীরা।’’
হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নীলাঞ্জন মণ্ডল বলেন, “আমাদের তরফ থেকে বেতনের জন্য যেখানে যা কাগজ পাঠানোর প্রয়োজন, আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। এজেন্সির সঙ্গেও একাধিকবার কথা বলেছি আমরা। কিন্তু, বেতনের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমি সমস্ত কর্মীকে অনুরোধ করেছি যেন হাসপাতালের পরিষেবা বিঘ্নিত না-হয়।’’ এর পরেও রোগীদের হয়রানি হলে তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে বলেও তিনি জানান।
সিউড়ি শহর আইএনটিটিইউসির সভাপতি রাজীব দাস বলেব, “আমরা হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য কর্মীদের কাছে অনুরোধ করলেও ওরা ওদের সিদ্ধান্ত অনড়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত যদি কর্মীদের মাইনে না ঢোকে, তাহলে শনিবার হয়ত বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী এসে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। আমরা চাই ওদের বকেয়া দ্রুত মিটে যাক৷ কিন্তু তার জন্য যাতে পরিষেবা ব্যাহত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।”
যদিও কর্মবিরত্তি শামিল চুক্তি-ভিত্তিক কর্মীরা বলছেন, ‘‘হাসপাতালের মতো জায়গায় পরিষেবা বিঘ্নিত করার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। বাড়ির বিদ্যুতের বিল, ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ, বাজারে ধার—কিছুই মেটাতে পারছি না, নিরুপায় হয়েই এই
সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy