E-Paper

ম্যালেরিয়া আক্রান্তের মৃত্যু, সরব বিরোধীরা

স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃষ্টিতে ভিজে সঞ্জতির জ্বর হয়েছে ভেবে বাড়ির লোকজন প্রথমে তেমন গা করেননি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১৩
Share
Save

ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এক বালিকার মৃত্যু ঘিরে ধন্দ তৈরি হয়েছে। মৃতের নাম সঞ্জতি মাঝি (৭)। ঝালদা ২ ব্লকের টাটুয়াড়া গ্রামে তার বাড়ি। সোমবার তাকে মৃত অবস্থায় পুরুলিয়া মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার দেহের ময়না তদন্ত করা হয়। যদিও বুধবার পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য দফতর বালিকার মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।

পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই বালিকার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পেলে মৃত্যুর কারণ বলা যাবে না।’’ তবে পুরুলিয়া মেডিক্যালের সুপার সুকমল বিষই বলেন, ‘‘ওই বালিকা ফ্যালসিফেরাম (পজ়িটিভ) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ছিল। কিন্তু তাকে মেডিক্যালে মৃত অবস্থায় আনায় চিকিৎসার সুযোগ আমরা পাইনি।’’ সঞ্জতির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে খোঁজ নিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তদন্তকারী দল গঠন করেছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সঞ্জতি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। কিছুদিন আগে সে ও পাঁচ বছরের ভাই বিকাশ মামাবাড়ি বাঘমুণ্ডির জিলিংসেরেং গ্রামে গিয়েছিল। সেখানেই ২৮ জুলাই সঞ্জতি জ্বরে অসুস্থ হয়। কয়েক দিন পরে বিকাশেরও জ্বর আসে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত বিকাশ বর্তমানে পুরুলিয়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃষ্টিতে ভিজে সঞ্জতির জ্বর হয়েছে ভেবে বাড়ির লোকজন প্রথমে তেমন গা করেননি। দ্বিতীয় দিন জ্বর বাড়ায় কারও পরামর্শে ট্যাবলেট এনে খাওয়ানো হয়। তাতেও জ্বর ছাড়েনি। খবর পেয়ে আশাকর্মী ওই বাড়িতে গিয়ে সঞ্জতিকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের লোকেরা জানান, ব্লক সদর বেশ দূরে। তুলনায় কড়েং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব কম। সেখানেই তাঁরা সঞ্জতিকে নিয়ে যাবেন। অভিযোগ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বদলে অসুস্থ বালিকাকে স্থানীয় এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ওষুধে কাজ না দেওয়ায় কোটশিলায় অন্য এক গ্রামীণ চিকিৎসককে দেখানো হয়। তাঁর ওষুধেও জ্বর কমেনি।

বালিকার মামা সোনু মুর্মু বলেন, ‘‘যে যেমন ওষুধ দিয়েছেন, ভাগ্নিকে খাইয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না। মেয়েটা ঝিমিয়ে পড়ছিল। খাবারও খাচ্ছিল না। শুধু জল চাইছিল। জ্বর কমতে চায়নি।’’

সূত্রের খবর, সোমবার ওই আশাকর্মী জিলিংসেরেং গ্রামে গিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটিকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খবর দেন। সে দিনই সঞ্জতিকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারেন, ওই বালিকা ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসা শুরু হলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় মেয়েটিকে পুরুলিয়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। পথেই তার মৃত্যু হয়। তবে সোমবারই সঞ্জতির ভাই বিকাশকে পুরুলিয়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।

সঞ্জতিকে কেন আগেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাননি? সঞ্জতির মামা সোনু মুর্মু বলেন, ‘‘কড়েং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাছে, কিন্তু সেখানে চিকিৎসা মেলে না। তাই গ্রামীণ চিকিৎসকই রাতবিরেতে আমাদের ভরসা।’’ তবে অসুস্থ হলেই যাতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়, সে সম্পর্কে মঙ্গলবার জিলিংসেরেং গ্রামে গিয়ে সচেতন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সঙ্গে ছিল ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মীরা।

গত ক’দিন আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুরুলিয়া জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২০ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ৩৪ জন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।

বিজেপির পুরুলিয়া কেন্দ্রের সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলেন, ‘‘সোমবার একটা মেয়ের মৃত্যু হল! অথচ বুধবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতর তার মৃত্যুর কারণ জানাতে পারছে না? ময়না তদন্ত করে তাহলে কী পেল? আসলে স্বাস্থ্য দফতর তথ্য চাপতে ব্যস্ত। যেমন দফতর, তেমন রাজ্য়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘মৃত্যুর দু’দিন পরেও স্বাস্থ্য দফতর কারণ জানাতে পারছে না। তার মানে স্বাস্থ্য দফতর কি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে? ওই পরিবারের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ সচেতনতা তৈরি করতে সরকার ব্যর্থ।’’ অভিযোগ মানেনি স্বাস্থ্য দফতর।

তবে জেলা পরিষদের কো-মেন্টর তৃণমূলের জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ে আমরা ক’দিন আগে বৈঠক করেছি। স্বাস্থ্য দফতরকে নিচুতলায় আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে ওই বালিকার মৃত্যুর দু’দিন পরেও কেন স্বাস্থ্য দফতর কারণ জানাতে পারছে না, তা
খোঁজ নিচ্ছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Baghmundi Malaria

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।